জেলা জুড়ে বেশ কয়েকটি লগ্নি সংস্থার কার্যালয়ে মঙ্গলবার অভিযান চালাল পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু জরুরি নথি, কয়েকজন আধিকারিককে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
দুর্গাপুরের অ্যাক্সেস মাল্টি ডেভলপার্স লিমিটেডের একাধিক কার্যালয়ে এ দিন পুলিশ যায়। কার্যালয়ের ভেতর এবং পাশের নর্দমা থেকেও বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। ধরা হয়েছে সংস্থার ৮ কর্মী-আধিকারিককে। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, মূল অভিযুক্ত সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাত্যায়ন ভট্টাচার্য-সহ আরও দুই ডিরেক্টর সরস্বতী বসু এবং সত্যব্রত বসু পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগকে। ধৃতদের আজ। বুধবার আদালতে তুলে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের আর্জি জানানো হবে বলেও জানান তিনি। |
সোমবার গভীর রাতেই কাত্যায়নবাবুর বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তার আগেই অবশ্য তিনি পালিয়ে যান। মঙ্গলবার সংস্থার একাধিক কার্য্যালয় এবং সংস্থার টিভি চ্যানেলের কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুর্গাপুর থানার পুলিশ। প্রচুর নথি ও কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। আটক করা হয় সংস্থার বেশ কিছু কর্মী ও আধিকারিককে। জিজ্ঞাসাবাদের পরে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। কাত্যায়নবাবুর মোবাইল ফোন বন্ধ।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, এ রাজ্য ছাড়াও অসম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা মিলে সংস্থার মোট ২৪টি কার্যালয় রয়েছে। সবগুলিই ‘সিল’ করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। ‘সিল’ করা হয়েছে সংস্থার ৪৯টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। জমি কেনা বেচা ছাড়াও মাসিক কিস্তিতে অর্থ নিয়ে এককালীন সেই অর্থ বাবদ গয়না দেওয়ার ব্যবসাও করত সংস্থাটি। মাসিক ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জমা রাখতে পারতেন গ্রাহক। সংস্থার নথি থেকে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের ভিতরে তেমন প্রসার না পেলেও উত্তরপূর্বে বেশ ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যবসাটি। পুষ্পিতা তামাং, সুমিতা তামাং, মান মায়া থামি, অমিলা গুরুং নামে কয়েকজন আমানতকারীর নামও মিলেছে।
এ দিন সকালেই আবার বারাবনির দোমহানি এলাকায় সারদা গোষ্ঠীর এক এজেন্টকে নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে কিছু আমানতকারীর বিরুদ্ধে। পরে ওই এজেন্ট বারাবনি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি জানান, প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা সারদার হয়ে তিনি সংগ্রহ করেছেন। তাঁরাই এ দিন বাড়িতে চড়াও হন বলে তাঁর অভিযোগ। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এ ব্যাপারে কোনও পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি। আসানসোল থেকে ধৃত সারদা গোষ্ঠীর ব্রাঞ্চ ম্যানেজার বেদপ্রকাশ গণকে এ দিন চারদিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলেন বিচারক। জামুড়িয়ার এক আমানতকারী তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
বর্ধমানেও অ্যাসপেন নামে এক লগ্নি সংস্থার অফিসে এ দিন তদন্তে আসে পুলিশ। এই সংস্থার মেমারি শাখার ম্যানেজার জয়ন্ত দাসকে কয়েকদিন আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এ দিন তাঁকে নিয়েই বর্ধমানের পারবীরহাটায় তদন্তে আসে পুলিশ। সংস্থার বর্ধমান শাখার ম্যানেজার প্রদীপ মুখোপাধ্যায়-সহ প্রায় ৭-৮ কর্মীকে সংস্থার কার্যালয়ে বসিয়ে রাখা হয়। পরে মোট ৯টা কম্পিউটার, ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকা, সংস্থার উৎপাদিত তেল ও চায়ের প্যাকেট সমেত একটি বড় ভ্যান মেমারি থানার দিকে রওনা হয়। খবর ছড়িয়ে পড়তে প্রচুর মানুষ পারবীরহাটার ওই শাখায় ভিড় করেন। তাঁরা নিজেদের সংস্থার এজেন্ট বলে পরিচয় দেন। তাঁদের অভিযোগ, সংস্থার মেমারি শাখার বিরুদ্ধে আমানত ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তার জেরে বর্ধমান শাখায় কেন তল্লাশি চালানো হবে?” এই এজেন্ট বলে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা সংখ্যায় প্রায় ৩০০ জন। আর মেমারি থানার পুলিশের সংখ্যা ২৭ জন। ফলে বর্ধমান পুলিশ লাইন থেকে বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বর্ধমানের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ। এসডিপিও বলেন, “দিন চারেক সময় দেব। তার মধ্যে যদি ওরা আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া শুরু না করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।” তবে সংস্থার বর্ধমান শাখার ম্যানেজার প্রদীপবাবু পুলিশকে লিখিত ভাবে জানান, ২ মে থেকে এই শাখায় আমানতকারীদের যা টাকা আছে, তা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। |