অন্যের টিফিন খাওয়ায় মার শিশুকে, অভিযুক্ত শিক্ষিকা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
সহপাঠীর টিফিনে ভাগ বসানোয় কিন্ডারগার্টেনের ছাত্রকে গাছে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রটির মা দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রণবানন্দ বিদ্যামন্দিরের ‘কেজি বি’-র ওই ছাত্রের নাম সাগর দত্ত। গত বছরই সে ওই স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তার মা রুনু দত্ত জানান, সোমবার দুপুরে ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েই তিনি জানতে পারেন, সে এক সহপাঠীর টিফিন বক্স থেকে বিস্কুট বের করে খেয়ে নিয়েছে। বাড়ি ফিরে এ জন্য তিনি ছেলেকে বকাবকি করেন এবং বলেন, পরের দিন তাকে একটি বিস্কুটের প্যাকেট দেওয়া হবে। সে যেন সহপাঠীকে তা দিয়ে ‘সরি’ বলে। বিকেলে তিনি লক্ষ করেন, সাগরের ডান কানের নীচে ফুলে গিয়েছে। |
কী ভাবে তাকে বাঁধা হয়েছিল, দেখাচ্ছে সাগর। ছবি: বিকাশ মশান |
রুনুদেবীর দাবি, সন্ধ্যায় সাগর স্কুল-ম্যাগাজিন চেয়ে এক শিক্ষিকার ছবি দেখিয়ে জানায়, তিনিই তাকে স্কুলে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে মেরেছেন। রাতেই তিনি এবং তাঁর স্বামী, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের কর্মী সমীর দত্ত অন্য কিছু অভিভাবককে বিষয়টি জানান। এ দিন সকালে কয়েক জন মিলে স্কুলেও যান। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কথায় কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ।
সাগর এ দিনও স্কুলে গিয়েছিল। বিকেলে ইস্পাতনগরীর ‘এ জোন’-এ দয়ানন্দ রোডে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবে ঘুম থেকে উঠেছে সে। হাতে একটি গেঞ্জি পেঁচিয়ে সে দেখায়, কী ভাবে শিক্ষিকা তার হাত বেঁধে দিয়েছিলেন। কোমরে দড়ি দিয়ে গাছে বেঁধে তিনি তাকে চড় মেরেছেন বলেও জানায় সে। যদিও আপাতত তার কোনও শারীরিক অসুবিধা নেই। সন্ধ্যায় বাবা অফিস থেকে ফিরলে সে লাফালাফিও জুড়ে দেয়।
রুনুদেবীর সঙ্গে এ দিন যে সমস্ত অভিভাবক স্কুলে গিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম কালীচরণ সরকারের দাবি, স্কুল ফি বাড়ায় তাঁদের মতো কিছু অভিভাবক প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সেই জন্যই তাঁদের এক জনের ছেলের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর কথায় সায় দেন সমীরবাবুও। স্কুলের অধ্যক্ষ জয়ন্তী সরকার অবশ্য পাল্টা বলেন, “যেহেতু সব ধরনের আর্থিক অবস্থার পড়ুয়া এই স্কুলে আসে, তাই আর পাঁচটা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের থেকে আমাদের ‘ফি’ বেশ কম। তা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তা নিয়েই অভিভাবকদের একাংশ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, দেওয়ালে পোস্টার সেঁটে দিচ্ছেন। হতে পারে, চাপ সৃষ্টি করার জন্যই তাঁরা একটি বাচ্চাকে সামনে রেখে এই অভিযোগ আনছেন।”
এ দিন অভিযুক্ত শিক্ষিকার সঙ্গে দেখা করতে দেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে প্রধান শিক্ষিকা দাবি করেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। শিশুদের প্রতি যথেষ্ট স্নেহশীল বলেই তিনি পরিচিত। অধ্যক্ষার দাবি, “ছাত্রেরা কথা না শুনলে স্কুলের চিড়িয়াখানায় ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। কিন্তু যে ভয়াবহ অভিযোগ আনা হয়েছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সেটা সত্যি হলে স্কুলের আরও অনেকে জানতেন।” পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। |