বিধায়কের অনুগামীরা বাঁচাচ্ছে দোষীদের, অভিযোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রানিগঞ্জ |
ধর্ষণে অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগ উঠল রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলির অনুগামীদের বিরুদ্ধে।
সোমবার দুপুরে রানিগঞ্জে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের পরে তৃণমূলের একাংশের চাপেই পুলিশ প্রথমে এফআইআর নিতে চায়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই অভিযোগেই তৃণমূলের একটি অফিসে আগুন লাগানো হয়। যদিও সোহরাব ওই অভিযোগ মানতে চাননি।
রানিগঞ্জে যেখানে ছাত্রীটির বাড়ি, সেই পূর্ব কলেজপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সোমবার দুপুর ২টো নাগাদ পুলিশেরই এক সাব-ইনস্পেক্টর রাস্তায় পড়ে থাকা অচেতন মেয়েটিকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু
|
সোহরাব আলি।
—নিজস্ব চিত্র। |
মেয়েটির বাড়ির সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি পুলিশ। রাত ৮টা নাগাদ মেয়েটির বাবা-মা পাড়ার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান। কিন্তু আগে থেকেই সেখানে কিছু তৃণমূল কর্মী হাজির ছিলেন। তার মধ্যে সোহরাব-ঘনিষ্ঠ খুরশিদ আলমও ছিলেন। মেয়েটির বাবা-মা অভিযোগ দায়ের করতে চাইলেও তাঁদের ঘণ্টাখানেক বসিয়ে রাখা হয়।
ইতিমধ্যে থানার সামনে জড়ো হন এলাকার লোকজন। শেষে রাত ৯টা নাগাদ বাবা-মাকে ভিতরে ডেকে জানানো হয়, অভিযোগ করতে হলে মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। তাতে রাজি হলে মেয়েটিকে রানিগঞ্জ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু আধঘণ্টা পরে ফিরে এলেও পুলিশ অভিযোগ নিতে টালবাহানা চলতে থাকে বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। তার পরেই পুলিশ অভিযোগ নেয়।
সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুফান মণ্ডলের অভিযোগ, “সোহরাব আলির ঘনিষ্ঠ খুরশিদ গোড়া থেকেই দুই অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। তিনিই তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছিলেন। রাতে যখন জাতীয় সড়কে বিক্ষোভ চলছে, তখন চাপে পড়ে দুই অভিযুক্তকে থানায় আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় খুরশিদ।” পুলিশের অবশ্য দাবি, অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে ধরা হয়েছে।
তুফানবাবুর দাবি, সোহরাবের অনুগামী কিছু লোকজনের দৌরাত্ম্যে রানিগঞ্জের বাসিন্দারা ইদানীং অতিষ্ঠ। কিছু দিন আগেই খুরশিদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ দায়ের হয়। দিন কয়েক আগে জামুড়িয়া পুরসভার এক এগজিকিউটিভ অফিসারের গাড়ি আটকায় তৃণমূলের কিছু লোকজন। সরকারি গাড়ি ভাড়া খাটানো হচ্ছে দাবি করে তারা পুলিশ ডাকে। পুলিশ গাড়িটিকে থানায় নিয়ে গিয়ে দু’ঘণ্টা আটকে রাখে। পরে জামুড়িয়া পুরসভা পুরো বিষয়টি জানালে গাড়ি ছাড়া হয়।
কংগ্রেসের রানিগঞ্জ ব্লক সভাপতি অনল মুখোপাধ্যায় আবার অভিযোগ করেন, জাতীয় সড়ক অবরোধের সময়ে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত তৃণমূলেরই সোহরাব-বিরোধী গোষ্ঠী। তাঁর দাবি, “তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এলাকায় অশান্তি বাড়ছে। এক দল অভিযোগ দায়ের করতে বাধা দিচ্ছে। আর এক দল ন্যায়বিচারের দাবি জানাতে গিয়ে গণ্ডগোল, ভাঙচুর করছে। কর্মীদের উপরে দলের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই।” তৃণমূলের প্রাক্তন রানিগঞ্জ ব্লক সভাপতি অলোক বসুর বক্তব্য, “প্রকাশ্য দিবালোকে ধর্ষণ এলাকায় আগে ঘটেনি। পুলিশের উচিত ছিল বাড়িতে গিয়ে অভিযোগ নেওয়া। তারা তা করেনি। মানুষের ক্ষোভ স্বাভাবিক।”
বিধায়ক সোহরাব আলি অবশ্য মানতে চাননি, তাঁর দলের কেউ ধর্ষণে অভিযুক্তদের আড়াল করেছে। তাঁর দাবি, “আমরা কাউকে আড়াল করছি না। দোষীরা ঠিক শাস্তি পাবে।” খুরশিদ দাবি করেন, “পুলিশকে তো আমরাই ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম।” আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দও অভিযোগ না নেওয়ার জন্য চাপ বা টালবাহানার কথা মানতে চাননি। |