ধর্ষণের জেরে রণক্ষেত্র রানিগঞ্জ
বালিকার উপরে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় জনতার রোষের আগুন রাজধানী দিল্লি আগেই দেখেছে। এ বার দেখল এই রাজ্যও।
এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দফায়-দফায় জাতীয় সড়ক অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ, গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল রানিগঞ্জ। চাপে পড়ে সোমবার মাঝরাতেই ধর্ষণে অভিযুক্ত দুই যুবককে ধরে পুলিশ। তারা তৃণমূল সমর্থক বলেই এলাকায় পরিচিত।
জনতা তাতে শান্ত হয়নি। পুলিশ সারা দিন কী করছিল, সেই প্রশ্ন তো ছিলই। ধৃতদের তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি তুলে মঙ্গলবার ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে জনতা। পুলিশ লাঠি চালালে তাদের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। ভাঙচুর করা হয় অবরোধে আটকে পড়া গাড়ি-বাস। র্যাফ নামে। গণ্ডগোলে জড়িত থাকার অভিযোগে দশ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ছাত্রীটির ডাক্তারি পরীক্ষা হয়।
ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত তৃণমূলের অফিস। রানিগঞ্জে।
ডিসেম্বরে তরুণী দামিনীর পরে সদ্য পাঁচ বছরের গুড়িয়া একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় কেঁপে উঠেছে দিল্লি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ব্যারিকেড ভেঙে ফেলতে চেয়েছে জনতা। প্রশ্নের মুখে পড়েছেন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। বর্ধমানের রানিগঞ্জেও পুলিশ এফআইআর নিতে অনেক দেরি করে বলে অভিযোগ। দুই অভিযুক্ত রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলির অনুগামী হওয়ায় তাদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে।
ছাত্রীর বাড়ি যে পাড়ায়, মঙ্গলবার রাতে সেখানে তৃণমূলের অফিসে আগুন লাগানো হয়। তাদের মধ্যে সোহরাবের বিরোধী গোষ্ঠীর তৃণমূল সমর্থকরা ছিলেন বলে স্থানীয়দের একাংশের দাবি। সোহরাব অবশ্য দাবি করেন, “কাউকে আড়াল করছি না।”
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার দুপুরে। বাসন্তীদেবী বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুল থেকে ফেরার পথে দুই যুবকের খপ্পরে পড়ে। তার বাড়ি পূর্ব কলেজপাড়ার হাসপাতাল পট্টিতে। ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, রজত খান ও কালিয়া শেখ নামে ওই দুই যুবক তাকে কোনও রাসায়নিকে বেহুঁশ করে ষষ্ঠীগড়িয়া পার্কের পাশে একটি ঝোপের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়েছিল। পরে এলাকার লোকজন ও পুলিশ তাকে তুলে বাড়ি ফেরায়। মেয়েটির বাবা সন্ধ্যায় থানায় যান। অভিযোগ, পুলিশ প্রথমে এফআইআর নিতে চায়নি। পরে অবশ্য তা নেওয়া হয়।
গণ্ডগোলের নানা মুহূর্ত
বাস থেকে টেনে নামানোর চেষ্টা চালককে, কাঁদানো গ্যাসের শেল ছুড়ছে পুলিশ, ভাঙচুর করা হচ্ছে গাড়িও।
মেয়েটিকে বাড়ি পাঠালেও পুলিশ কেন নিজে অভিযোগ দায়ের করল না, অভিযুক্তদেরই বা কেন আটক করা হল না, এই প্রশ্ন তুলে সোমবার রাতেই স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে থানায় বিক্ষোভ, পরে রানিগঞ্জের তারবাংলা মোড়ে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেফতার করলেও জনতা অবরোধ তুলতে চায়নি। রাত ৩টে নাগাদ পুলিশ গিয়ে তাঁদের হটিয়ে দেয়। তখনই পুলিশের এলোপাথাড়ি লাঠিচার্জে এক জন জখম হন বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার সকালে এলাকার মানুষ মিছিল বের করেন। বেলা ১১টা নাগাদ বাসন্তীদেবী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ছাত্রী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, অভিযুক্তদের তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। শাস্তি দিতে হবে আইনশৃঙ্খলা সামলাতে ‘ব্যর্থ’ রানিগঞ্জ পুলিশকেও। যতক্ষণ না আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ নিজে এসে সেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ততক্ষণ অবরোধ চলবে। দুপুর ১টা নাগাদ এসিপি অজয় প্রসাদ ঘটনাস্থলে গেলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাননি অবরোধকারীরা।
পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে মিছিল ছাত্রীদের।
এই নিয়ে ফের বচসা বেধে যায়। সেই সময়ে পুলিশ ফের লাঠি চালালে জনতা খেপে ওঠে। পুলিশের একটি জিপ ও মোটরবাইকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের জিপ। পুলিশ দু’টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটালে জনতা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। অবরোধে আটকে পড়া মোট ১১টি মিনিবাস-সহ বহু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রায় চার কিলোমিটার দূরে পাঞ্জাবী মোড়েও পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর হয়। শেষমেশ এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশ চাডিয়া, এসিপি অজয় প্রসাদ বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। র্যাফ নামে। তার পরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তাদের অন্তত দশ কর্মী জখম হয়েছেন বলে পুলিশের দাবি।
পরে পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ জানান, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগে দশ জনকে ধরা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। ধর্ষণের তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তিনি মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “অভিযোগ পেয়েই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” এ দিন আসানসোল আদালতে তোলা হলে দুই ধৃতকে ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার রানিগঞ্জে ছবিগুলি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.