ফলের বাক্সে টাকা পাঠাতেন এজেন্টরা |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
দেখলে মনে হবে ফলের পেটি-ই। ডালার আশপাশ থেকে বেরিয়ে রয়েছে কুচি কুচি সাদা কাগজ। ডালাটা খুললে কোনও বাক্সে মিলবে কয়েক থোকা আঙুর। কোনও বাক্সে কয়েকটি আপেল কিংবা কলা। কিন্তু তার নীচেই সযত্নে গুছিয়ে রাখা থাকত একশো, পাঁচশো টাকার তাড়া তাড়া নোট। ওই ফলের পেটি করেই ট্রেনে কোচবিহার, ডুয়ার্স থেকে শিলিগুড়ির সদর দফতরে পাঠানো হত সারদা গোষ্ঠীর টাকা। সারদা অর্থলগ্নি সংস্থার কিছু এজেন্টই জানিয়েছেন সে কথা।
সারদা-র এজেন্টদের কয়েকজন জানিয়েছেন, সপ্তাহে অন্তত দু’দিন আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে এ ভাবে টাকা পাঠানো হত। একাধিকবার রেল পুলিশের নজরদারি বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও ‘কলকাতার ফোন’-এর সুবাদে গন্তব্যে পৌঁছতে অসুবিধে হয়নি বলে কবুল করেছেন কয়েকজন ‘বিগ এজেন্ট’। |
বালুরঘাটে জেলাশাসকের দফতরের সামনে সারদার আমানতকারীদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র। |
বাক্সের আশপাশেই ভিড়ে মিশে সাদা পোশাকে হাজির থাকতেন সারদা-র নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষীরা। এজেন্টরা জানিয়েছেন, রক্ষীরা আসতেন কলকাতা থেকে। তাদের পরিচয় এজেন্টদের জানানো হত ট্রেনে বাক্স তোলার আগের দিন রাতে। শিলিগুড়ি বা সরাসরি কলকাতা থেকেই ফোন করে এজেন্টদের বলে দেওয়া হত, কোথায় কোন নিরাপত্তা রক্ষী থাকবেন। নিরাপত্তা রক্ষীদের পরিবর্তনও করা হত মাঝে মধ্যেই।
সারদা-র শিলিগুড়ি সদর দফতরের অধীনে ছিল দার্জিলিং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও উত্তর দিনাজপুর। ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার, ফালাকাটা, ধূপগুড়ি, বীরপাড়া জয়গাঁ, কামাক্ষাগুড়িতে সারদা গোষ্ঠীর অফিস রয়েছে। আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে সকাল ৬টায় ট্রেনটি ছেড়ে সওয়া ৭টা-র মধ্যে বীরপাড়া পৌঁছায়। এই দুই স্টেশনেই টাকার বাক্স ট্রেনে ওঠানো হত। এজেন্টরা জানিয়েছেন, অফিসের ব্যস্ততম সময়ে বিস্কুট, ফলের বাক্সে করে তাঁদের ওই টাকা ট্রেনে তুলে দিতে বলা হত। অ্যাম্বুল্যান্সও ব্যবহার হতো। জলপাইগুড়ি এসপি অমিত জাভালগি বলেন, “বিভিন্ন রকম তথ্য পাচ্ছি। সব তথ্যই যাচাই করে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ বলছে, সারদা-র মাথাভাঙা শাখায় মাসে গড়ে ৪৫ লক্ষ করে টাকা জমা হত। উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন শাখা থেকে শিলিগুড়ির অফিসে জমা পড়ত মাসে চার কোটি। মাস দু’য়েক আগেই এই টাকা ফেরতের প্রক্রিয়ায় গরমিল দেখা দিতে শুরু করে। |