মেসি না রোনাল্ডো? তর্কটা উঠলেই অবধারিত দু’ভাগ হয়ে যায় ফুটবল দুনিয়া। ফুটবল পায়ে দুই মহাতারকার রেষারেষি তো ইতিমধ্যেই মহাকাব্য! কিন্তু এমন ধুন্ধুমার ‘মেসি বনাম রোনাল্ডো’ লড়াই এ বার ‘মেসি এবং রোনাল্ডো’ হয়ে ওঠার জোর সম্ভাবনা বিশ্ব শান্তির প্রতীক পঁচানব্বই ছুঁই ছুঁই এক তরুণের জন্য। নাম নেলসন ম্যান্ডেলা!
ম্যান্ডেলার পঁচানব্বইতম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আফ্রিকা একাদশ বনাম বিশ্ব একাদশ ম্যাচ করতে উদ্যোগী হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফুটবল কিংবদন্তি জোমো সোনো। কসমস ক্লাবে পেলের সতীর্থ থাকা জোমোর উদ্যোগ ঠিকঠাক এগোলে এ বছরের ১৮ জুলাই জো’বার্গে যুযুধান দুই মহাতারকাকে একই জার্সি গায়ে খেলতে দেখার স্বপ্ন সত্যি হবে বিশ্বের তাবড় ফুটবল প্রেমীর! |
ম্যান্ডেলার নাতি নদাবা ম্যান্ডেলা আছেন এই উদ্যোগের পাশে। সব ঠিক থাকলে জোমো-নাদাবার প্রস্তাবিত বিশ্ব একাদশে মেসি, রোনাল্ডোর সঙ্গে খেলতে দেখা যাবে ওয়েন রুনি, জাভি হার্নান্দেজ, আর্জেন রবেনের মতো ফুটবল নক্ষত্রদেরও। উল্টো দিকে আফ্রিকা একাদশে খেলতে পারেন প্রাক্তন বাফানা বাফানা অধিনায়ক স্টিভন পিনার। ম্যাচ আয়োজনের জন্য জোমোর আবেদনের প্রাপ্তিস্বীকার করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের চিফ এক্সিকিউটিভ ডেনিস মাম্বল। কয়েক দিনের মধ্যেই এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এমনিতে মেসি বনাম রোনাল্ডো লড়াইয়ে শনিবারই এক নতুন অধ্যায় যোগ হয়েছে মেসি লা লিগায় রোনাল্ডোর অ্যাওয়ে গোলের রেকর্ড ভেঙে দেওয়ায়। গত বছর এক মরসুমে ২৩টা অ্যাওয়ে গোল করে রেকর্ড গড়েছিলেন রোনাল্ডো। শনিবার চলতি মরসুমে নিজের চব্বিশতম অ্যাওয়ে গোল করে সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন মেসি। সঙ্গে টানা পনেরোটা অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল করে মেসি ভেঙেছেন দানি গুইজার ২০০৭/০৮ মরসুমে টানা চোদ্দো ম্যাচে অ্যাওয়ে গোলের রেকর্ডও।
বিশ্ব ফুটবলে বার্সেলোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের দুই মহানায়কের প্রবল প্রতাপটা বোঝার জন্য ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কারের দিকে এক নজরই যথেষ্ট। যেখানে সেই ২০০৭-এর পর থেকে এই দু’জনের বাইরে ব্যালন ডি’অর ওঠেনি আর কারও হাতে। ২০০৮-এ রোনাল্ডো জিতেছিলেন। তার পর থেকে চার বার মেসি। তবে সেখানেও বিতর্ক আছে। গত বছর বর্ষসেরার ভোটাভুটিতে রোনাল্ডোর দাবি নস্যাৎ করে আর্জেন্তিনা অধিনায়ক মেসি নিজের প্রথম তিন পছন্দ বেছেছিলেন ইনিয়েস্তা, জাভি এবং রাদামেল ফালকাওকে। অন্য দিকে, পর্তুগাল অধিনায়ক রোনাল্ডো নিজের ভোটাধিকার দিয়ে দেন সতীর্থ ব্রুনো আলভেজকে। যাতে আলভেজ তাঁকে ভোট দিতে পারেন। এবং কোনও রকম সঙ্কোচ না দেখিয়ে রোনাল্ডো বলেছিলেন, নিয়ম থাকলে তিনি নিজেকেই ভোট দিতেন। তাঁর কথায়, “আই অ্যাম হোয়াট আই অ্যাম।” দুই ফুটবলারের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবশ্য সব থেকে লাভ হয়েছে লা লিগার। যেখানে রোজ এক জন একটা রেকর্ড গড়ছেন তো অন্য জন সেটা ভাঙছেন। আর বিশ্বজুড়ে হু হু করে বাড়ছে লা লিগার টিআরপি। গত বছরের হিসাব বলছে লা লিগায় রোনাল্ডো ৪৬টা গোল করেন। রিয়ালের হয়ে মোট গোল ৬০। বার্সার হয়ে লা লিগায় মেসির গোল ছিল ৫০। সব মিলিয়ে ক্লাবের হয়ে মোট গোল ৭৩। তবে গত মরসুমে গার্ড মুলারের রেকর্ড ভাঙা মেসির ক্লাব ও দেশের হয়ে গোলের সংখ্যা ছিল অবিশ্বাস্য, একানব্বইটা!
চলতি মরসুমেও লা লিগায় সোনার বুটের লড়াইয়ে সেই মেসি আর রোনাল্ডো। এখনও পর্যন্ত ৪৪ গোল করে এগিয়ে মেসি। ৩১ গোল করে ঠিক পিছনে রোনাল্ডো।
তবে মনে করা হচ্ছে ফুটবল-বৈরি ভুলে ফুটবল-মৈত্রীর পথে দুই তারকা একসঙ্গে হাঁটতে রাজি হয়ে যেতে পারেন একটাই কারণে। আর সেই কারণটা অবশ্যই নেলসন ম্যান্ডেলা! |