হাতি তাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, এই অভিযোগে বনকর্মীদের মারধর করলেন গ্রামবাসীরা। বুদবুদের তিলডাঙ গ্রামে হাতি তাড়াতে গিয়েই বাসিন্দাদের রোষে পড়েন ওই কর্মীরা। রবিবার গভীর রাতে এই গোলমালে খোয়া গিয়েছে তিনটি সার্চ লাইট, ৬০টি মশাল এবং বেশ কয়েক জন বনকর্মীর টাকার ব্যাগ। বন দফতরের তরফে বুদবুদ থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই হাতির পালটি ঘুরে বেড়াচ্ছে দামোদরের কাঁকসা ও বুদবুদ এলাকায়। দলে মোট ১৮টি হাতি রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি খুদে। শেষ পাঁচ দিন ধরে পালটি রয়েছে বুদবুদের সেনা ছাউনির অ্যামুনিশন ডিপোর পাশের জঙ্গলে। বন দফতর সূত্রে জানা যায়, জঙ্গলে খাবার ও জল পাওয়ায় হাতিরা এলাকা ছাড়তে চাইছে না। তা ছাড়া অ্যামুনিশন ডিপো সংলগ্ন এলাকায় আগুনের ব্যবহার নিষিদ্ধ। ফলে হাতিদের লক্ষ করে মশাল ছোড়া বা পটকা ফাটানো যাচ্ছে না। খেতের ফসল নষ্ট হওয়ার ভয়ে গ্রামবাসীরা হাতির গতিপথ আটকে দিচ্ছেন। ফলে বারবার চেষ্টা করেও হাতির পালকে এলাকাছাড়া করা যাচ্ছে বলে না বন দফতর সূত্রে খবর।
দীর্ঘদিন ধরে হাতির পাল এলাকায় থাকায় শঙ্কিত তিলডাঙ, সন্ধিপুর, সুখডাল প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বন দফতর হাতি তাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে না। হুলা পার্টির কাছ থেকে সার্চ লাইট, মশাল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একাধিক জায়গায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। রবিবার রাতে পরিস্থিতি চরমে ওঠে। এ দিন সন্ধ্যায় হাতি তাড়ানোর একটি বিশেষ দল এসে পৌঁছয় বাঁকুড়ার সোনামুখী থেকে। রাতে শুরু হয় হাতি তাড়ানোর অভিযান। অভিযোগ, হুলা পার্টি সুখডালে গেলে সেখানে আটকে রাখা হয় মালি তারাপদ মাড্ডিকে। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। এর পরে রাত ২টো নাগাদ তিলডাঙ এলাকার মাঠে রোষের মুখে পড়ে হুলা পার্টি। অভিযোগ, দলের চার জনকে মারধর করা হয়। মালি বালু টুডু, বনশ্রমিক মদনগোপাল রায় ছাড়াও মার খান সোনামুখীর হুলা পার্টির সদস্য পার্থ ঘোষ এবং বাপি বাউড়ি। পুলিশ গিয়ে সবাইকে উদ্ধার করে। শেষ দু’জনকে মানকর গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাতেই বুদবুদ থানায় বন দফতরের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
বন দফতরের বর্ধমান বিভাগের পানাগড় রেঞ্জ অফিসার কাশিনাথ দে জানান, ভয়ে হুলা পার্টি বেঁকে বসায় অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার মহকুমাশাসক আয়েষা রানি আহমেদ, বর্ধমানের বিভাগীয় বনাধিকারিক স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিসে বৈঠকে বসেন। পঞ্চায়েতের তরফে স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর অ্যামুনিশন ডিপোতেও এক দফা বৈঠক হয়। সেনাবাহিনী হাতি তাড়ানোর ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। এর পরেই ফের অভিযানে রাজি হন বনকর্মীরা ও হুলা পার্টির সদস্যরা। রেঞ্জ অফিসার কাশিনাথবাবু বলেন, “নিরাপত্তার অভাবে কর্মীরা বেঁকে বসেছিলেন। কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ায় সোমবার রাতে ফের অভিযান শুরু হয়েছে।” |