উধাও আরও এক ভুঁইফোঁড় সংস্থার লোকজন
তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পুলিশ দেখল, সাজানো-গোছানো অফিসে ৩টি কম্পিউটার। সেগুলি নেড়েচেড়ে দেখতেই তাঁরা অবাক। দু’টি কম্পিউটার থেকে উধাও হার্ডডিস্ক। পুলিশ বলছে, সরিয়ে নেওয়া ওই যন্ত্রাংশেই রয়েছে আমানতকারীদের জমানো টাকার হদিশ।
এই দৃশ্য সোমবার সকালে আরামবাগের বাসুদেবপুরে ‘ইউরো গ্রুপ অব কোম্পানিজ’ নামে একটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার অফিসের।
প্রশাসন সূত্রের খবর, গালভরা নাম নিয়ে বাসুদেবপুরে একটি বাড়ির দোতলায় ঘর ভাড়া নিয়ে রমরমিয়ে চলছিল সংস্থাটি।
সারদা কাণ্ড মাথাচাড়া দিতেই অবশ্য ভোল পাল্টে যায় কর্তাব্যক্তিদের। দিন পাঁচেক আগে তালা পড়ে যায় অফিসে। গা-ঢাকা দেন কর্তাব্যক্তিরা। মাথায় হাত পড়ে আমানতকারীদের। শনিবার তাঁরা সংস্থার বন্ধ অফিসের সামনেই বিক্ষোভ দেখান। তালা ভাঙার চেষ্টা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়।
এ দিন স্থানীয় দৌলতপুরের বাসিন্দা গোলাম মোস্তাফা নামে এক এজেন্ট সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক আনিয়মের অভিযোগ দায়ের করেন আরামবাগ থানায়। এর পরেই পুলিশ তালা ভেঙ্গে ভিতরে ঢোকে। ৩টি কম্পিউটার ছাড়াও বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার হয় সেখান থেকে।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “মনে হচ্ছে ভবিতব্য আঁচ করেই কম্পিউটার থেকে হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। টাকাকড়িও কিছু ছিল না।” পুলিশ জানায়, সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় সল্টলেকের ৫ নম্বর সেক্টরে। সংস্থার কর্ণধার বিশ্বপ্রিয় গিরি-সহ অন্য অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। বিশ্বপ্রিয় গিরির বাড়ি মেদিনীপুরের কাঁথিতে।
আরামবাগে সংস্থার অফিসে তদন্তে পুলিশ। ছবি: মোহন দাস।
আরামবাগ শহর-সহ গোটা মহকুমায় চিটফান্ডের রমরমার অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। সারদা কাণ্ডের প্রেক্ষিতে এ বার ওই মহকুমায় চিটফান্ড নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস। ব্যাঙের ছাতার মতো চিটফান্ডের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার দাবিতে এ দিন বিকেলে মিছিল করে কংগ্রেস। এর পরে মহকুমাশাসক অরিন্দম রায়ের হাতে ৭ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
কংগ্রেস নেতা প্রভাত ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “গোটা মহকুমা চিটফান্ডে ছেয়ে গিয়েছে। ওই সমস্ত চিটফান্ডের তালিকা, কর্তাব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশ করা হোক। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। চিটফান্ডগুলির পিছনে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কিছু কর্তার সক্রিয় মদত আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাঁদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এ দিকে, সোমবারেও জেলায় রোজভ্যালী অফিস থেকে অনেক আমানতকারী টাকা তুলে নেন। গত কয়েক দিন ধরেই সুদের মায়া ছেড়ে এই সংস্থা থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন অনেকেই।
রোজভ্যালী সঞ্চয় প্রকল্পের চুঁচুড়া শাখার সিনিয়র অফিসার সমর পাল জানান, সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ কেটে মূল টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। আরামবাগের গৌরহাটি মোড় সংলগ্ন রোজভ্যালী শাখা অফিসের ম্যানেজার বরুণকুমার মাজি বলেন, নির্দিষ্ট আবেদন করলেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। উৎপল গুহ নামে সংস্থার এক এজেন্ট বলেন, “এই শাখায় হাজার চারেক এজেন্ট আছে। সংস্থার উপর ভরসা হারাইনি আমরা।”
রোজভ্যালী টাকা ফেরালেও সেই রাস্তায় হাঁটছে না অন্য অনেক সংস্থা। ‘আইকোর’ সংস্থার অনেক আমানতকারীর বক্তব্য, তাঁদের জানানো হয়েছে নিদিষ্ট সময়সীমা (ম্যাচিওরিটি) পূরণের আগে টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। একই কথা জানিয়েছেন, অ্যালকেমিস্ট, ইনোভা-র মতো সংস্থায় টাকা জমানো বেশ কিছু লোকজন। টাকা ফেরত চাইলে এজেন্টদের থেকে তাঁরা পেয়েছেন বরাভয়। সিঙ্গুরের খাসের ভেড়ির বাসিন্দা হারাধন আদক জানান, ২০০৮ সালে আইকোরে ১০ হাজার টাকা জমা দেন তিনি। ২০২০ সালে ১ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা। হারাধনবাবু বলেন, “ম্যাচিওরড্ না হলে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই বলে জানানো হয়েছে।” সংস্থার এজেন্টরা জানিয়েছেন, আমানতকারীদের বোঝানো হচ্ছে এখানে টাকা সুরক্ষিত থাকবে। সেই কথায় ভরসা করছেন লোকজন। তবে, ওই এলাকার বাসিন্দা নিতাই পোড়েল ৩টি পৃথক সংস্থায় ১ লক্ষ টাকা রেখেছেন। তিনি বলেন, “ভরসা পাচ্ছি না। এজেন্টের কাছে গিয়ে টাকা ফেরত চাইব।”
গোল্ডেন লাইফ অ্যাগ্রো ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার ডিরেক্টর টিপু সুলতানের দাবি, “আমাদের অন্য ব্যবসা আছে। সঞ্চয় প্রকল্পে অল্প কিছু আমানতকারী আছেন। কেউ টাকা ফেরত চাইলে তা দিয়ে দেওয়া হবে। তবে এখনও কেউ চাননি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.