এক দিন সারা দেশে ‘খবর’ হবে সারদা, স্বপ্ন দেখাতেন সুদীপ্ত
০ এপ্রিল থেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। অথচ ওই তারিখ পর্যন্ত আমানতকারীদের টাকা জমা পড়েছে সারদা সংস্থায়। এ তথ্য জানিয়েছেন হাওড়ার বাউড়িয়া শাখার কয়েক জন এজেন্ট।
বাউড়িয়া শাখা অফিসটি ছিল বজবজ রিজিওনাল শাখার অধীনে। বাউড়িয়ার এক এজেন্ট বলেন, “সংস্থার ডামাডোলের কিছু কিছু খবর আমাদের কানে আসতে থাকায় আমরা রিজিওনাল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মনিন্দর সিংহকে জিজ্ঞাসা করি, নতুন করে আমানত সংগ্রহ করব কিনা? তিনি আমাকে বলেন, কোনও চিন্তা নেই, কাজ করে যাও। সেই মতো ১০ এপ্রিল এক জন আমানতকারীর কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা আমি শাখা অফিসে জমা করি।”
গত ১৬ এপ্রিল থেকেই অবশ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাউড়িয়ার শাখা অফিস এবং বজবজ রিজিওনাল অফিস। গা ঢাকা দিয়েছেন এই সমস্ত অফিসের কর্মী এবং কর্ণধারেরা। এজেন্টরা জানিয়েছেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহের কাজ হত মূলত এই শাখা অফিসগুলি থেকেই। সংগৃহীত টাকা চলে যেত সংস্থার রিজিওনাল অফিসে। সেখান থেকে যেত সল্টলেকের সদর দফতরে, মিডল্যান্ড পার্কে। রিজিওনাল অফিসের হয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজাররাই (এজিএম) যোগাযোগ রাখতেন সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে। বাউড়িয়ার শাখার অন্য এক এজেন্টের কথায়, “সুদীপ্ত স্যারের বহু কর্মকাণ্ডের কথা জানেন এজিএমেরা। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেও বহু তথ্য জানতে পারবে পুলিশ।”
নজরে সারদা (এজেন্টদের রোজগার)
• আমানতকারী ১ বছরের জন্য টাকা রাখলে কমিশন ১৪ শতাংশ।
১৪ বছরের জন্য টাকা রাখলে কমিশন ২১ শতাংশ।
• উৎসবের মরসুমে, অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বাড়তি ভাতা।
• এক মাসে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার উপরে বিশেষ ভাতা।
এজেন্টরা জানিয়েছেন, ‘সুদীপ্ত স্যার’ কী চাইছেন সেই বার্তা তাঁরা পেতেন সংস্থার এজিএমদের কাছ থেকেই। আমানত তোলার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হত তাঁদের উপরে। বলা হত, এই টাকা বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। সংস্থার ব্যবসা বাড়ছে প্রতি মাসে ১০ শতাংশ এবং বছরে ১২০ শতাংশ হারে। এই পদ্ধতির নাম ছিল ‘প্রজেক্ট প্রফিট ডিস্ট্রিবিউশন’। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে কোনও অসুবিধা হবে না। নানা পুস্তিকা, সেবির চিঠি এই সব দেখিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বিশ্বাস করানো হত। এজেন্টরা জানিয়েছেন, কে কত আমানত তুলতে পারে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা হত পরস্পরের মধ্যে। সদর দফতর থেকে রিজিওনাল দফতর পর্যন্ত একটাই বার্তা দেওয়া হত, ‘আমানত তোলো, ব্যবসা বাড়াও’। সেমিনার এবং এজেন্টদের বৈঠকেও একই কথা বলতেন সুদীপ্তবাবু।
এই সব বৈঠকে ভাষণ দিতে গিয়ে সুদীপ্তবাবু নিজেকে এক জন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলে প্রচার করতেন। টাকা ফেরতের প্রশ্নে তিনি বলতেন, প্রয়োজন হলে নিজে সাইকেলে করে গ্রাহকদের বাড়ি গিয়ে টাকা ফেরত দিয়ে আসবেন। এক জন এজেন্ট বলেন, “তিনি মোট ছ’বার সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। দু’বারই সদর দফতরে দেখা হয়েছে রাত ১২টার পরে। খুব বেশি কথা বলেননি সুদীপ্তবাবু। বৈঠকের মাঝে মোবাইলেও কথা বলতেন তিনি।” ওই এজেন্টের কথায়, “বৈঠক শেষে আমি ওঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বললাম, স্যার একবার আমাদের শাখা অফিসে আসুন। তিনি বললেন, এক কোটি টাকার ব্যবসা দাও, তা হলেই আমি তোমাদের শাখা অফিসে যাব।” কাঁথি ও মেচেদায় আরও চারটি সেমিনারে সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে ওই এজেন্টের। তিনি জানালেন, সুদীপ্ত বলতেন, সারদা এক দিন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু করবেন। দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে সারদার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকবে। সারদা এক দিন ‘খবর’ হবে। সকলে সারদাকে নিয়ে আলোচনা করবে।
ওই এজেন্টের আফসোস, ‘‘শেষমেশ সেই খবরই হল সারদা। তবে তা যে এত ভয়ঙ্কর হবে, তা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারিনি।” আপাতত গ্রাহকদের কাছে ৩৩ লক্ষ টাকার দায় নিয়ে বাড়ি ছাড়া ওই এজেন্ট।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.