প্রবন্ধ ২...
তিনি শুধুই যোদ্ধা?
ববর্ষের সূচনায় আনন্দবাজার পত্রিকায় (ক্রোড়পত্র ‘তথাস্তু’, ১৫-৪) ‘যদি’ মর্মে বেশ কয়েকটি লেখা ছাপা হয়েছিল। তার প্রথমটিই নেতাজি সুভাষচন্দ্র সম্পর্কিত। লেখক স্বপন দাশগুপ্ত। এটি অতীব সুখের, তার কারণ এই যে, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানেও এই ব্যক্তির সম্বন্ধে সাধারণের ঔৎসুক্য আজও বর্তমান।
কিন্তু লেখকের শেষ বক্তব্যনেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু শুধুই যোদ্ধা বা বীর মানা যায় না! আমি তাঁর বিস্তৃত লেখা ও কাজ থেকে কয়েকটি মাত্র উদ্ধৃতি করছি।
সুভাষচন্দ্র আই সি এস পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া মাত্র এক বিড়ম্বনায় পড়ে গেলেন তিনি ভবিষ্যতে কী করবেন, এই ভেবে। নানান ব্যক্তিকে লেখা চিঠিপত্রে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। দেশে ফিরে তিনি গুরু রূপে পেলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে। দেশবন্ধুর সঙ্গে তাঁর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ কলকাতা কর্পোরেশন বা পুরসভায়। প্রথমে চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার বা সি ই ও, পরে মেয়র। সুভাষ তখন মেজদা শরৎচন্দ্র বসুর উডবার্ন পার্ক-স্থিত বাড়িতে থাকতেন। মা বিভাবতীর কাছে আমি শুনেছি, তিনি প্রতিদিন শহর কলকাতার নানান জায়গায় ঘুরে দেখতেন কোথায় কী প্রয়োজন। কলকাতা শহরের পয়ঃপ্রণালী কী করে আরও উন্নত করা যায় সে নিয়ে তাঁর চিন্তা ছিল। নিজে সর্বদা সময়মত অফিস যেতেন, যাতে অন্যান্য কর্মচারীও ঠিক সময়ে হাজিরা দেন। এটা সে সময় কর্পোরেশনে মোটেই চালু ছিল না।
একটি মজার ঘটনা শুনেছিলাম। দেশবন্ধু তাঁর নানা কাজের মধ্যে ‘ন্যাশনাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুভাষ সেখানে পড়াতেন। একদিন কলেজে তাঁর খোঁজ করায়, উত্তর এসেছিল ‘সুভাষ বেঞ্চি পড়াচ্ছে’। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
মেয়র থাকাকালীন তাঁর শরীর ভাল না থাকায় ইউরোপে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়েছিল। সেখানেও তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে নানা শহরে ঘুরেছিলেন, মেয়রদের ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নিতে।
১৯৩৮ সালে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলেন ও হরিপুরায় সম্মেলন হল। তাঁর সভাপতির ভাষণ যুগান্তকারী। স্বাধীন ভারতের শাসনব্যবস্থা নিয়ে গভীর ভাবে ভেবেছিলেন তিনি। এ কথা কি আজ আমরা ভুলে যাব যে, তিনিই প্রথম ‘জাতীয় প্ল্যানিং কমিশন’ করেছিলেন ও প্ল্যানিংয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি আনতে হবে, সে কথা বলেছিলেন। জওহরলাল নেহরু তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন যে তিনি নিজে কেন চেয়ারম্যান হচ্ছেন না। তাতে সুভাষচন্দ্র বলেছিলেন, তা হলে কংগ্রেসের উচ্চ কর্তৃপক্ষ প্ল্যানিং কমিশনই হতে দেবেন না!
এর অনেক পরে আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক এবং একই সঙ্গে আজাদ হিন্দ সরকারের সর্বোচ্চ পদে আসীন হন সুভাষচন্দ্র। সেখানেও আমরা দেখেছি, তাঁর দু’টি কর্মধারা সমান্তরাল রেখায় চলছে। তিনি সৈনিক তৈরি করছেন এমন লোকদের, যারা কখনও রাইফেল বা বেয়নেট দেখেনি। মেয়েদের সঙ্গে নিলেন ‘রানি ঝাঁসি রেজিমেন্ট’ তৈরি করে। বহুদিন আগে ভ্রাতুষ্পুত্রী গীতার অটোগ্রাফ খাতায় লিখেছিলেন, ‘নারীর কাজ কেবল রন্ধন ও সন্তান উৎপাদন নয়’।
শাসনব্যবস্থার খুঁটিনাটি নিয়ে লিখেছিলেন, লিখেছিলেন আর্থিক ব্যবস্থার বিষয়েও। ব্যাঙ্ক, মুদ্রা সব ব্যাপারেই তাঁর সুচিন্তিত মত ছিল। তিনি বুঝেছিলেন, স্বাধীন ভারতের প্রধান শত্রু অন্ধ ধর্মবিশ্বাস। আজাদ হিন্দ সেনাদের একসঙ্গে ওঠাবসা, খাওয়া-শোওয়ার আদেশ ছিল। রোমান হরফে হিন্দুস্থানির প্রচলন করলেন। নতুন গান লেখালেন। একসূত্রে সকলকে বাঁধলেন, ভারতে থেকে আমরা যে কাজটা করতে পারলাম না।
যাঁরা দেশে নেতৃত্বে ছিলেন, তাঁদের ব্যর্থতা ও পরাজয়ের দায় সুভাষচন্দ্রের উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.