সম্পাদকীয় ২...
মর্মান্তিক
গিনেস বুকে নাম তুলিতে গিয়া অপঘাত-মৃত্যু হইয়াছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কর্মী শৈলেন্দ্রনাথ রায়ের। শিলিগুড়ির সেবক রোডে করোনেশন সেতুর কাছে তিস্তা নদের চারশো মিটার বিস্তৃতি তারে ঝুলিয়া অতিক্রম করিতে গিয়া তাঁহার চুলের বেণী তারসংলগ্ন কপিকলে আটকাইয়া যায়। প্রাণপণ চেষ্টাতেও বেণী কপিকলের বন্ধনমুক্ত করিতে না পারায় আতঙ্কে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হইয়া সম্ভবত তাঁহার মৃত্যু ঘটে। পুলিশকর্মী শৈলেন্দ্রবাবু ছুটিতে ছিলেন। কিন্তু তাঁহার এই প্রয়াসের কথা তিনি আগাম তাঁহার দফতর ও রাজ্য প্রশাসনকে লিখিত জানাইয়াছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনও করেন, সেই সঙ্গে হোর্ডিং, বিজ্ঞাপনও ছিল। অর্থাৎ সকলের অজান্তে, গোপনে নয়, রীতিমত ঢাকঢোল পিটাইয়া আকাশপথে স্রেফ বেণীর জোরে তিস্তা পার হওয়ার কামাল দেখাইবার আয়োজন হইয়াছিল।
শৌর্য, সাহসিকতা ও বীরত্বের প্রেরণা এবং সময় সময় রেকর্ড বুকে আপন নাম লিখাইবার তাগিদ বহু মানুষকেই তাড়না করিয়া বেড়ায়। এ হেন তাগিদেই ব্যক্তি নিজ দায়িত্ববোধের কথা বিস্মৃত হয়। কেবল একখানি লাইফ জ্যাকেট আর দড়ি সম্বল করিয়া এরূপ দুঃসাহসিক অভিযানে শামিল হওয়া যে একপ্রকার আত্মহননেরই অন্য রূপ, সে কথা সম্ভবত শৈলেন্দ্রনাথ ভুলিয়াছিলেন। যেমন ভুলিয়াছিলেন নিজ পরিবারের প্রতি কর্তব্যের কথাও। এমন অসতর্ক পদক্ষেপের মূল্য দুঃসাহসীদের সঙ্গে তাহার পরিজনদেরও যে চুকাইতে হয়। সমস্ত দেশেই ইহা চরম সত্য। কিন্তু তফাত হইল, ইউরোপ-আমেরিকার সভ্য বিশ্বে এ ধরনের সাহস ও বীরত্বের কীর্তি স্থাপন করার প্রয়াস সমাজ ও প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতা পাইয়া থাকে। বিশেষত যেখানে শারীরিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে, সেখানে রকমারি নিরোধক বন্দোবস্তও প্রশাসনের তরফে মজুত রাখা হয়। বেণীর জোরে তিস্তাজয়ের পরিকল্পনার কথা পুলিশ বিভাগ ও প্রশাসনকে জানাইবার পর শৈলেন্দ্রনাথের পতনশঙ্কা আঁচ করিয়া তাহা রোধ করার ব্যবস্থা কি প্রশাসনের রাখা উচিত ছিল না? শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের কৈফিয়তশৈলেন্দ্র ছুটিতে ছিলেন এবং ইহা পুলিশের কোনও অনুষ্ঠানও ছিল না। শুধু এই যুক্তিতে কি পুলিশ-প্রশাসন হাত ধুইয়া ফেলিতে পারে? নাগরিক হিসাবে শৈলেন্দ্রনাথের প্রতি কি প্রশাসনের কোনও কর্তব্য নাই? জাল পাতিয়া কিংবা দমকলের ইঞ্জিন, মই ইত্যাদি সেতুতে মজুত রাখিয়া কি এই অভিযানটিকে প্রাপ্য নিরাপত্তা দেওয়া যাইত না?
মৃত্যুর ঝুঁকি আছে জানিয়াও যদি কোনও নাগরিক কোনও অভিযানে লিপ্ত হন এবং সরকারি কর্তৃপক্ষকে সে সম্পর্কে আগাম বিজ্ঞাপিত করিয়া থাকেন, তবে তাঁহার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অবশ্যই সরকারের কর্তব্য। সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিক তার দায় এড়াইতে পারেন না। যে-কোনও অভিযানে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে ধরিয়া লইলেও মৃত্যু ঠেকাইবার ব্যবস্থাগ্রহণে অনীহা বা অনাগ্রহ এক নির্মম হৃদয়হীনতার পরিচায়ক। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেট সেই দোষে দোষী হইয়া থাকিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.