চোর চোর, আরে এ যে রেলেরই কর্মী
ভীর রাতে ট্রেনের বাতানুকূল কামরায় প্রায় সব যাত্রীই তখন ঘুমোচ্ছেন। হঠাৎই হ্যাঁচকা টানে ঘুম ভেঙে গেল এক মহিলা যাত্রীর। কামরার নাইটল্যাম্পের মৃদু আলোয় তিনি দেখলেন, দু’টি লোক তাঁর ব্যাগপত্র নিয়ে পালাচ্ছে। ‘চোর, চোর’ চিৎকার শুরু করেন ওই মহিলা। তা শুনে মহিলার স্বামী এবং অন্য যাত্রীরা উঠে এক জনকে ধরেও ফেললেন। অন্য জন পালিয়ে গেল।
চমকটা এল তার পরেই।
২১ এপ্রিল শিয়ালদহ-অজমের এক্সপ্রেসে ব্যাগচোরকে পাকড়াও করার পরে দেখা গেল, সে অন্য কেউ নয়, ওই কামরার অ্যাটেন্ড্যান্ট নীরদ শর্মা! কামরার ভিতরেই এক প্রস্ত গণপিটুনি দেওয়ার পরে ধানবাদ স্টেশনে তাকে রেল পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ধানবাদের রেল পুলিশ জানায়, আদালত নীরদকে আপাতত জেল-হাজতে পাঠিয়েছে। তার সঙ্গীর খোঁজ চলছে। খোয়া যাওয়া মালপত্র উদ্ধার হয়নি। কলকাতায় ফিরে ওই দম্পতি রাজ্যের রেল পুলিশকেও সব জানান।
ট্রেনে চুরি নতুন কিছু নয়। দূরের ট্রেনে সহযাত্রী বন্ধু সেজে পানীয় বা খাদ্যে মাদক মিশিয়ে অথবা ওষুধ ছড়িয়ে যাত্রীদের আচ্ছন্ন করে লুঠপাট হামেশাই হয়। কিন্তু কামরার রেলকর্মীই সঙ্গীকে নিয়ে যাত্রীদের লটবহর সাফ করছে, এমন ঘটনা বিরল। তাই এই ঘটনায় যাত্রীরা হতবাক, উদ্বিগ্নও। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন। গত ২১ তারিখে রাত ১১টার বদলে দেড়টা নাগাদ ট্রেনটি শিয়ালদহ থেকে ছেড়েছিল। তাই ট্রেনে উঠেই বেশির ভাগ যাত্রী ঘুমিয়ে পড়েন। নীরদ আর তার শাগরেদ সেই সুযোগটাকেই
কাজে লাগিয়েছিল।
রেল সূত্রের খবর, অভিযোগকারী দম্পতির নাম সন্তোষ ও ঊর্মিলা হরলালকা। কলকাতায় সন্তোষবাবুর একাধিক জামাকাপড়ের দোকান রয়েছে। শিয়ালদহ থেকে সস্ত্রীক জয়পুর যাচ্ছিলেন। তখনই এই ঘটনা ঘটে। কলকাতায় ফিরে সন্তোষবাবু জানান, ধানবাদের একটু আগে ট্রেনের গতি কমতেই নীরদ ব্যাগ দু’টি সঙ্গীর হাতে দিয়ে তাকে নামিয়ে দেয়। ওই দু’টি ব্যাগে প্রচুর মূল্যবান নথি, টাকা, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ক্রেডিট কার্ড, আইফোন, আইপ্যাড ইত্যাদি ছিল। পরে পুলিশ কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, “কোচ অ্যাটেন্ড্যান্ট এমনটা করতে পারে, ভাবতেই পারিনি।”
বাতানুকূল কামরা তুলনায় বেশি নিরাপদ বলে বেশির ভাগ যাত্রীর বিশ্বাস। নিছক আরামের জন্য নয়, বাড়তি নিরাপত্তার আশায় ওই কামরার টিকিট কাটেন অনেকে। তেমনই একটি কামরায় এই চুরির ঘটনা রেলে সামগ্রিক ভাবে যাত্রী-নিরাপত্তা নিয়েই ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই চুরিতে রেলেরই লোক জড়িত থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছেন রেলকর্তারা। যাত্রীরা বলছেন, পরিষেবা দেওয়ার লোকই যদি চুরি করে, কার উপরে বিশ্বাস রেখে ট্রেনে চড়বে মানুষ? যাত্রীদের অসতর্কতাকে কটাক্ষ করে এক শ্রেণির রেলকর্তার বক্তব্য, মালপত্র সুরক্ষিত রাখতে যাত্রীদেরই সচেতন হওয়া উচিত।
এমনই এক রেলকর্তা বলেন, “যাত্রীরা একটু সাবধান হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না।” তা হলে রেল পুলিশ বা আরপিএফ কী করবে? কামরায় অ্যাটেন্ড্যান্ট মোতায়েন করারই বা কী দরকার?
ওই রেলকর্তার কাছে এই সব প্রশ্নের জবাব মেলেনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.