|
|
|
|
দারিদ্রের সঙ্গে যুঝে ভূগোলে সোনা
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • দুমকা |
বাবা দিনমজুর। মা বিড়ি শ্রমিক। ছেলেবেলা থেকে কৈশোর। পুরোটাই কেটেছে দারিদ্রের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এত কষ্ট সত্ত্বেও লেখাপড়া ছাড়েননি। তিনি এক বঙ্গসন্তান। নাম দুলাল সরকার। যিনি এ বার স্নাতক স্তরে ভূগোলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সিধো কানহো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বর্ণপদক পেলেন।
দুলালের ইচ্ছে ছিল রাষ্ট্রপতির সামনেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্বর্ণপদক নেওয়ার। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে যাঁরা পদক ও মানপত্র নেবেন তেমন পাঁচ জনের নাম আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল।
এ দিন দুমকায় সিধো কানহো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বসির আহমেদ খান ২৪ জনের হাতে স্বর্ণপদক ও মানপত্র তুলে দেন। যাঁদের মধ্যে বালুরঘাটের ছেলে দুলাল এক জন। দুলাল জানান, “অভাবি পরিবারের ছেলে হওয়ায় লেখাপড়া চালাতে হয়েছে কষ্ট করেই। কখনও গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহায্যে, কখনও গ্রামের বিড়ি শ্রমিকের তহবিল থেকে সাহায্য এসেছে। বরাবরই পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়েছি। তাই বালুরঘাটের কুমারগঞ্জ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক আর গোপালগঞ্জ রঘুনাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতে সমস্যা হয়নি।”
দুলালের কথায়, “শিক্ষকদের সাহায্য না পেলে এত দূর আসা
সম্ভব হত না।” লেখাপড়ার উৎসাহ দেখে গোপালগঞ্জ রঘুনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কার্তিকচন্দ্র বর্মন সাহেবগঞ্জের বি এম কে কলেজের অধ্যাপক রামচন্দ্র প্রসাদ সিংহর সঙ্গে দুলালের পরিচয় করিয়ে দেন। দুলাল বলেছেন, “রামচন্দ্র স্যার নিজের বাড়িতে রেখে আমায় স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করিয়েছেন।”
২০১২ সালে বি এম কে কলেজ থেকে ভূগোলে পঁচাত্তর শতাংশেরও বেশি নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন দুলাল। আজ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক নিতে এসে আপ্লুত দুলাল বালুরঘাটের গ্রামে বাবা ফটিক সরকার ও মা নিধা সরকারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় এক বার কেঁদেও ফেলেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, “কেন্দ্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ৫১ শতাংশ অধ্যাপকের পদ এখনও খালি পড়ে রয়েছে। রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অবস্থা শোচনীয়। অতি দ্রুত এই সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সময়োপযোগী করে তুলতে হবে।”
অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলা বাংলা বিভাগকে রাজ্য মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি নিয়ে আজ দুমকার রাজভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পনেরো মিনিট কথা বলেন এখানকার বাঙালিরা। দুমকায় বাঙালিদের নিয়ে তৈরি সংগঠন ‘বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা সমিতি’র সম্পাদক গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাষ্ট্রপতি আমাদের দাবিগুলি মন দিয়ে শুনেছেন। এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। আমরা যেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখি সে কথাও রাষ্ট্রপতি আমাদের জানান।”
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলা বাংলা কলেজগুলির প্রতিনিধিরা জানান, রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানোর অ্যাকাডেমিক প্যারেডে বাংলা বিভাগের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান হেমাদিত্য রায়চৌধুরী বলেন, “মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অনুমোদন না থাকায় আমাদের অ্যাকাডেমিক প্যারেডে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। অথচ প্রণববাবু অর্থমন্ত্রী থাকার সময় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তখন আমরা তাঁকে স্বাগত জনিয়েছিলাম।” |
|
|
|
|
|