মুখের কথায় তালাক নয়, দাবি মুসলিম মেয়েদের
স্বামীর মুখ থেকে ‘তালাক’ শব্দটা কোনও রকমে বেরিয়ে পড়লেই বিয়েটা মাটি। ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই। ফিরে যাওয়ারও উপায় নেই। যদি ফিরে যেতে হয় স্বামীর কাছে, আরও এক পুরুষের সঙ্গে নিকাহ্ করতে হবে মেয়েটিকে। নতুন স্বামীর ঘর করতে হবে অন্তত একটি গোটা মাস। থাকার মতো হতে হবে সেই থাকা, নচেৎ নয়। এর পরে সেই পুরুষটি ফের মেয়েটিকে তালাক দিলে তবেই পুরনো স্বামীর সঙ্গে ফের নিকাহ্ হতে পারে তার।
কিন্তু আর এই অত্যাচার মেনে নিতে চান না তাঁরা। তাই একজোট হয়ে নিজের মতামত জানাতে এগিয়ে এসেছেন এমন ঘটনার শিকার হওয়া মহিলারা। ‘ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন’-এর উদ্যোগে কলকাতায় আয়োজিত একটি সাধারণ সভায় জানা গেল, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, গুজরাত, রাজস্থান ইত্যাদি রাজ্যগুলিতেও এমন ঘটনার উদাহরণ রয়েছে প্রচুর। এমনই মৌখিক তালাকের শিকার হওয়া ৬৮ জন মহিলার কাহিনি নিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে একটি বই।
নিজেদের অধিকার সুরক্ষিত করতে চান মুসলিম মেয়েরা।—নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে-গঞ্জে খুঁজলে এমন উদাহরণ যে আরও অনেক পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু এমনটা আর চাইছেন না মুসলিম মেয়েরা। ওই সংগঠনের আহ্বায়ক রহিমা খাতুন জানান, আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম হেনস্থার শিকার হচ্ছেন মুসলিম মহিলারা। কোরানে যেটুকু যা লেখা রয়েছে, তার ব্যাখ্যা দেশ-কাল-সমাজ-পরিবেশের সঙ্গে পাল্টে পাল্টে যাচ্ছে। ইচ্ছেমতো নানা জায়গায়, নানা ভাবে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে। মেয়েদের আইনি অধিকার, সামাজিক বা আর্থিক নিরাপত্তা কিছুই সুরক্ষিত হচ্ছে না। রহিমা জানান, তালাক দেওয়ার একটি নিদির্ষ্ট নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই সেই নিয়ম মানা হয় না। পরপর তিন বার এক সঙ্গে তালাক শব্দটা বললে দিলেই তালাক হওয়ার কথা নয়। তিন বার ‘তালাক’ উচ্চারণের মধ্যে বেশ কিছুটা সময়ের ব্যবধান থাকার কথা। তা ছাড়াও বিধি অনুযায়ী তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে সালিশি সভা হওয়ার কথা। কিন্তু তার তোয়াক্কা করেন ক’জন! অনেক সময়ে মাত্র এক বার ‘তালাক’ বলা হলেও স্বামীর ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয় মেয়েদের। ফলে শ্বশুরবাড়ির সব অধিকার হারিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে বাবা-মায়ের কাছে। যেমন শোনা গেল হাওড়ার বছর পঁয়তাল্লিশের অরজুপান খাতুনের কথা। কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’ তাঁকে মৌখিক ‘তালাক’ দিয়ে দেন স্বামী। তার পর থেকে মেয়েকে নিয়ে একাই দিন কাটছে তাঁর। এ তালিকায় রয়েছেন রাজস্থানের আনোয়ার জাহানের মতো মেয়েরাও। মাত্র ১১ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তাঁর।
স্বামী তো রোজগার কিছু করতেনই না, উল্টে মারধর করতেন আনোয়ারকে। এক দিন রাগের মাথায় ‘তালাক’ দিয়ে বসলেন স্ত্রীকে। আনোয়ার বাড়ি ছাড়তে রাজি হলেন না, আদালতে গেলেন। তবু শেষরক্ষা হল না। মহারাষ্ট্রের মেয়ে ফইমিদার জীবনটা আবার অন্য রকম। বিয়ের আগে স্বামীকে বলেননি, তাঁর চশমা রয়েছে। শুধু সেই কারণে বিয়ের পর থেকে কথায় কথায় তাকে অপমান করতে শুরু করেন স্বামী। শুরু হয় মারধরও। তার পর এক দিন মুখের কথায় তালাক দিয়ে দেন তাঁকে। রহিমা বলেন, “বেশির ভাগ মেয়েই কোরানে নির্দিষ্ট করে কী বলা রয়েছে, সে সম্পর্কে সচেতন নন। আমাদের দেশে তালাকের নিয়ম-বিধিগুলি আলাদা করে কোথাও তালিকা করে দেওয়া নেই। তা থাকা দরকার। অন্য দিকে, বিয়ের কাবিলনামার (বিয়ের শংসাপত্র, শরিয়ত অনুযায়ী) সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে ও বিচ্ছেদের নিয়ম নিয়ে তৈরি হওয়া দরকার ‘নিকাহ্নামা’, যাতে ইচ্ছেমতো কেউ এই মেয়েদের ঠকাতে না পারেন। রহিমার কথায়, “নিকাহ্নামা হতে হবে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে। মেয়েদের সুযোগ-সুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.