আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ছ’দিনের মাথাতেই সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের একটি ‘অবৈধ’ বাড়ি সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য ‘ভাড়া’ দেওয়ার অভিযোগ উঠল নির্মাণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে। নির্মাণকারী সংস্থার তরফে দাবি, ভাড়া দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট ২৩ এপ্রিল ওই বাড়িটিকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। ওই জায়গার সবুজ ফিরিয়ে দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলাকারীদের অভিযোগ, আদালতের এই নির্দেশ সত্ত্বেও বাড়ি ফের ভাড়া দেওয়া হয়েছে, অথচ প্রশাসন নির্বিকার। প্রয়োজনে তাঁরা ফের আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে জানিয়েছেন মামলাকারীরা।
এ দিকে, আদালতের রায় হাতে না পাওয়ায় কোনও পদক্ষেপ করা যায়নি বলে জানিয়েছে মহকুমা প্রশাসন। পুরসভা সূত্রের খবর, বাড়িটি নিয়ে বিতর্ক বহু আগে থেকে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে শাসক দলের একাংশের মধ্যেও। বিধাননগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত অভিযোগের আঙুল তুলেছেন পুরসভার দিকেই। তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বাড়িটি নিয়ে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিল না। এ থেকেই স্পষ্ট, এতে কোনও স্বার্থ রয়েছে।” ঘটনায় অভিযোগের তির বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর দিকে। যদিও কৃষ্ণাদেবী জানিয়েছেন, এমন প্রশাসনিক বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। মহকুমাশাসক এ দিন বিধাননগর পুলিশকে এ বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন। রবিবার রাতেই এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। |
রবিবার সেন্ট্রাল পার্কের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বিয়েবাড়ির আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকেই সাজ সাজ রব ওই বাড়ির মূল প্রবেশপথের সামনে। বাঁশের বাতা দিয়ে একটি বড় জায়গা ঢেকে রাখা। ফলে বাইরে থেকে চোখে পড়বে না। যদিও মূল প্রবেশপথ বিশেষ ভাবে সাজানো। কন্যা কিংবা পাত্রপক্ষ কেউই এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। যদিও তাঁদেরই এক জন জানান, তাঁরা এই বাড়ি সম্পর্কে আদালতের নির্দেশ জানেন না। সংবাদমাধ্যম হাজির হতেই অবশ্য অতিসক্রিয় হতে দেখা যায় নিরাপত্তা রক্ষীদের।
আইনজীবী অরুণাংশু চক্রবর্তী ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেন্ট্রাল পার্কের ওই নির্মাণটির বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা করেন। তার প্রেক্ষিতেই ওই নির্মাণকে বেআইনি ঘোষণা করা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে সেটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই বাড়িটি ফের বিয়েবাড়ি উপলক্ষে ভাড়া দেওয়া হল, এমন অভিযোগ করে মামলাকারীদের এক জন অমিতাভ মজুমদার বলেন, “আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হল। প্রয়োজনে ফের আদালতের দ্বারস্থ হব।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, এক চেয়ারম্যান পারিষদ বিধাননগর মহকুমা প্রশাসনকে বিষয়টি মৌখিক ভাবে জানান। তা সত্ত্বেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না? মহকুমাশাসক মলয় মুখোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সূত্রের খবর, আদালতের রায় মহকুমা দফতরে পৌঁছয়নি। পাশাপাশি এ দিনের বিয়ের আয়োজন নিয়ে লিখিত কোনও অভিযোগ মহকুমাশাসকের কাছে করা হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও মহকুমাশাসক পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানান। |