জমি ফেরত চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি
জমি দিয়ে ৫০ বছরেও মেলেনি ক্ষতিপূরণ
প্রশাসন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। তাই রাস্তা নির্মাণের জন্য সরকারকে নিজেদের খেতের দোফসলি, তিনফসলি জমি এক কথায় ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই রাস্তা তৈরি হয়েছে। রাস্তার উপর দিয়ে যানবাহনও চলতে শুরু করেছে। রাস্তার দৌলতে আশেপাশের এলাকার সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় সমৃদ্ধ হয়েছে এলাকার অর্থনীতিও। কিন্তু শুনতে অবাক লাগলেও, ওই জমিদাতাদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, দীর্ঘ ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও তাঁরা এক টাকাও ক্ষতিপূরণ পাননি। এতদিন প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে বিস্তর ঘোরাঘুরি করেও হাসিল হয়নি কানাকাড়িও। ক্ষতিপূরণের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কার্যত পথে বসেছেন বহু কৃষিজীবী পরিবার। এমনকী ক্ষতিপূরণের অপেক্ষা করতে করতে কয়েক জন জমিদাতা প্রয়াতও হয়েছেন। ওই জমিদাতারা সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্ত হয়েছেন। জমি ফেরত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে।
এই রাস্তা ঘিরেই বিতর্ক ময়ূরেশ্বরে। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬৩ সালে ময়ূরেশ্বর থানার শিবগ্রাম থেকে ষাটপলশা পর্যন্ত (১৯ কিমি) রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর জন্য জেলা ভূমি অধিগ্রহণ দফতরের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার চাষিদের কাছে অধিগ্রহণের নোটিস পাঠানো হয়। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের আশ্বাস পেয়ে রাস্তার জন্য জমি ছেড়ে দেন কয়েক জন চাষি। কিন্তু রাস্তা নির্মাণের কাজ চলাকালীন কেউ কেউ ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেও অধিকাংশ জমিদাতাই আজও পর্যন্ত কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ।
জমি অধিগ্রহণের নোটিস পেয়ে ৩৫ কাঠা জমি ছেড়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় বজরহাট গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখ। ওই গ্রামেরই তাজেমুন্নেশা বিবিও দিয়েছিলেন ১২ কাঠা জমি। কিন্তু তাঁদের ভাগে ক্ষতিপূরণের টাকা আর জুটবে না। কারণ ১৯৭৫ সালে প্রয়াত হয়েছেন আব্দুল মজিদ। আর তাজেমুন্নেশা মারা গিয়েছেন ১৯৭৫ সালে। আব্দুল মজিদের বড় ছেলে আব্দুল কাদের শেখ ও তাজেমুন্নেশার ছেলে কাশেম আলি খাঁ-র কথায়, “জীবদ্দশায় আমাদের বাবা-মারা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে ঘোরাঘুরি করেও ১ টাকাও ক্ষতি পূরণ পাননি। আমরাও পাব কিনা জানি না!”
রাস্তা গড়ার জন্য ৬৪ কাঠা জমি দিয়েছিলেন খোদ কাশেমবাবুই। একই গ্রামেরই দীন মহম্মদ শেখ দিয়েছিলেন ৫৯ কাঠা জমি। দু’জনেরই দাবি, “আমাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি হয়েছে। গড়ে উঠেছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। যাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে বিপণন কেন্দ্র। কিন্তু অধিগ্রহণের সরকারি নোটিস ছাড়া আমরা কিছুই পাইনি। বরং পথে বসার সামিল হয়েছে।” তাঁদের আরও দাবি, বর্তমানে ওই সব জমির দাম কাঠা প্রতি ৭০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে।
সম্প্রতি ওই রাস্তাটির সংস্কার এবং সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। জমিদাতাদের একাংশ তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের আর্জি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ক্ষতিপূরণ না দিলে জমি ফিরিয়ে দেওয়া হোক। তা না হলে জমির উপর নির্মিত রাস্তা সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ করতে দেবেন না বলেও তাঁরা হুমকি দিয়েছেন।
দীন মহম্মদ আর কাশেমবাবুদের আক্ষেপ, “এখন বিভিন্ন প্রকল্পে জমিদাতাদের জন্য ক্ষতিপূরণের জন্য সরকার ভাল রকম প্যাকেজ দেয় বলে শুনেছি। অথচ দীর্ঘ ৫০ বছরেও আমরা কিছু পেলাম না!” প্রশাসনের কাছে তাঁদের প্রশ্ন, “রাস্তার জন্য আমরা বিনা বাধায় নিজেদের চাষের জমির সিংহ ভাগ ছেড়ে দিয়ে কি অন্যায় করেছি?”
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তার জন্য জমি দিয়েও কেন ওই সব জমিদাতারা ক্ষতিপূরণ পাননি বুঝতে পারছি না। তাঁরা আমাকে লিখিত ভাবে জানালে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। তাঁদের দাবির বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার জন্য বিধানসভায় প্রস্তাব তুলব।”
জেলা স্পেশ্যাল ল্যান্ড রিকুইজেশন অফিসার রঞ্জন চক্রবর্তীর আবার বক্তব্য, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু মন্তব্য করব না। যা বলার জেলাশাসক বলবেন।” অন্য দিকে, জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্পেশ্যাল ল্যান্ড রিকুইজেশন দফতরকে বলছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.