চার বছরে ২৪টি বাল্যবিবাহ
ছাত্রীর বিয়ে রুখে ক্ষোভের মুখে শিক্ষকরা
বিয়ে হয়ে যাওয়ার ফলে স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে একের পর এক ছাত্রী। বাধ্য হয়ে বাল্যবিবাহ রুখতে উদ্যোগ নিয়েছেন নওগাঁ বিলসা হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সোমবার তাঁরা স্কুল প্রাঙ্গণে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের বিষয়ে একটি শিবিরের আয়োজন করেন। বিডিও, মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতেই সেখানে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। অভিভাবক থেকে ছাত্রী, উপস্থিত শ্রোতাদের একটি বড় অংশের রাগ আছড়ে পড়ে শিক্ষকদের উপরেই। বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি অনুষ্ঠান শেষ করে দেন কর্তাব্যক্তিরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুখেন্দু দাস অবশ্য বলেন, “গ্রামবাসীরা একদিন তাঁদের ভুল বুঝতে পারবেন।” শিক্ষকদের সমর্থনের আশ্বাস দেন মহকুমাশাসকও। চার দশকেরও পুরনো এই স্কুলটি ২০০৫ সালে হাইস্কুলে উন্নীত হয়। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৩৮ জন। তার মধ্যে ৫৫ শতাংশই ছাত্রী। কিন্তু হাতে-গোনা কয়েক জন ছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে। শিক্ষকরা জানান, ছাত্রীদের অধিকাংশেরই অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। স্কুলেরই তথ্য বলছে, গত চার বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই ২৪ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম, দুই সম্প্রদায়ই রয়েছে। পরে তারা আর স্কুলমুখো হয়নি। শিক্ষকদের দাবি, তাঁরা নানা সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাল্যবিবাহ রুখতে সচেতনতার প্রচার চালান। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।
সাঁইথিয়ায় সচেতনতা শিবির।—নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি শিক্ষকরা জানতে পারেন, আরও দু’টি মেয়ের বিয়ের উদ্যোগ নিয়েছে তাদের পরিবার। তাদের একজনের বিয়ে নির্দিষ্ট ছিল সোমবারই, অন্যজনের ৬ মে। ওই খবর পাওয়ার পরই শিক্ষকরা প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে গিয়ে পরিবারের লোকেদের বোঝান। যার জেরে এ দিন নির্ধারিত বিয়েটি বাতিল হয়ে যায়। অন্য মেয়েটিরও বিয়ে নিয়ে দোটানায় পড়েছেন তার বাড়ির লোকজন। এ দিন ওই দুই ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, রান্নার জন্য কাঠ চেরাই, ঘর রঙ-করা থেকে বহু আয়োজনই সম্পূর্ণ। মুষড়ে পড়েছেন দুই পরিবারের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, “জানি ১৮ বছরের নীচে মেয়ের বিয়ে আইনত অপরাধ। কিন্তু ভাল পাত্র হাত ছাড়া করতে চাইনি। আগেও এলাকার বহু মেয়ের অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে। তখন তো বাধা আসেনি! আমরাই বলি হলাম!” দু’টি বিয়ে রুখেই থেমে থাকেনি শিক্ষকদের উদ্যোগ। বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে এলাকার মানুষকে সচেতন করতে এ দিন তাঁরা স্কুলে একটি আলোচনাসভারও আয়োজন করেন। ওই সভায় হাজির ছিলেন সিউড়ি সদর মহকুমাশাসক চন্দ্রনাথ রায়চৌধুরি, সাইঁথিয়ার বিডিও জাহিদ সাইদ, সদর এ জোনের ডিএসপি (আইন শৃঙ্খলা) শেখ জসিমুদ্দিন, সাঁইথিয়ার ওসি কার্তিকমোহন ঘোষ, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রাজা ঘোষ প্রমুখ। শ’ তিনেক অভিভাবক এবং বাসিন্দাদের পাশাপাশি ছিলেন ওই দুই ছাত্রী এবং তাদের পরিবারের লোকজনও। ওই মঞ্চেই দশম শ্রেণির ছাত্রী সীমা মণ্ডলের নাম রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের জন্য পাঠানোর প্রস্তাব করলেন রাজা ঘোষ। সে নিজের বিয়ে রুখে দিয়েছিল।
কিন্তু সমাজের একটি বড় অংশ যে এখনও আইনকে কেবল বইয়ের পাতায় রাখতে চায়, তা বোঝা গেল এর পরেই। নাবালিকা দুই স্কুলছাত্রী বিয়ে ভেঙে যাওয়ার জন্য আক্ষেপ প্রকাশ করে মঞ্চে উঠে। তারা জানায়, তারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে, কটূক্তির ভয় পাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা সদানন্দ সূত্রধর, নেপালচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “বাল্যবিবাহের মূলে রয়েছে পণপ্রথা। প্রশাসন আগে পণপ্রথাকে রোধ করুন। তবেই নাবালিকা বিয়ে রোখার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য হবে।” এই আক্রমণে দৃশ্যত বিব্রত হয়ে পড়েন প্রশাসনিক কর্তারা। তড়িঘড়ি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করে দেওয়া হয়। প্রাথমিক স্কুল বোর্ডের চেয়ারম্যান রাজা ঘোষ অবশ্য বলেন, “বাল্যবিবাহ সামাজিক ব্যাধি। সরকার একটি মেয়ের পড়াশোনার জন্য স্কুলের পোশাক, বইপত্র থেকে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। সেখানে পরিবারের লোকেরা তাকে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে বিয়ের নামে একের পর এক বলি দেবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশে দাঁড়াবো।” মহকুমাশাসকও বলেন, “মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় পরিবারের ক্ষোভ স্বাভাবিক। কিন্তু নারী শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশের স্বার্থে বাল্যবিবাহ রোধে ব্যবস্থা নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.