সর্বজিৎ সিংহকে নিয়ে ফের নতুন করে শুরু হল ভারত-পাক চাপান-উতোর। নয়াদিল্লি চাইছে, এ বার অন্তত মানবিকতার খাতিরেই সর্বজিৎকে মুক্তি দিক পাকিস্তান সরকার। সেই সঙ্গেই ভারতের আর্জি, সর্বজিতের চিকিৎসাও তাঁর নিজের দেশেই হোক। কিন্তু আপাতত ভারতের কোনও প্রস্তাবেই নরম হওয়ার ইঙ্গিত দেয়নি ইসলামাবাদ। উল্টে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, সর্বজিতের চিকিৎসায় যাতে কোনও খামতি না থাকে, সে দিকে সর্ব ক্ষণ নজর রাখা হচ্ছে।
এ দিকে, সর্বজিতের শারীরিক অবস্থা একই রকম। লাহৌরের জিন্না হাসপাতালে গভীর কোমায় আচ্ছন্ন রয়েছেন এই ভারতীয় বন্দি। গত শুক্রবার কোট লাখপত জেলে অন্য কয়েক জন কয়েদিদের হাতে আক্রান্ত হন সর্বজিৎ। মাথায় মারাত্মক চোট লাগে তাঁর। তার পর থেকেই আশঙ্কাজনক তিনি। ইসলামাবাদে আজ ভারতীয় হাই কমিশনের তরফেও জানানো হয়েছে, ‘সর্বজিতের অবস্থার উন্নতির কোনও লক্ষণই নেই’। আজ সকালেই পাক সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়ায়, চিকিৎসার জন্য সর্বজিৎকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জিন্না হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড। কিন্তু পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়নি। আজ সকালেই চার সদস্যের এক মেডিক্যাল প্যানেল গঠন করা হয়। সর্বজিতের শারীরিক পরিস্থিতি বিচার করে সেই প্যানেলই পরে জানায়, চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। তবে আইসিইউতে কোমায় থাকলেও তাঁর নাড়ির গতি, রক্তচাপ ও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা যথেষ্ট সন্তোষজনক। অবস্থার একটু উন্নতি হলে তাঁর অস্ত্রোপচারও করা হবে বলে আশ্বাস দেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
তবে এই প্রতিশ্রুতিতেও খুব একটা নিশ্চিন্ত হতে পারছে না সর্বজিতের পরিবার ও ভারত সরকার। ভারতে ভাইয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য ভারত সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন সর্বজিতের দিদি দলবীর কৌর। ভারত সরকারও প্রয়োজনে সব রকমের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সর্বজিতের পরিবারের প্রতি। কিন্তু পাক সরকার এখনও পর্যন্ত সর্বজিৎকে তাঁর নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে নারাজ। অন্তত এ ব্যাপারে সদর্থক কোনও ইঙ্গিত এখনও মেলেনি। ভারতীয় কূটনীতিকদের হাসপাতালে যাওয়া নিয়ে গত কাল যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, সে বিষয়ে যদিও নড়ে বসেছে পাক সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, এখন থেকে সপ্তাহে দু’দিন সর্বজিৎকে দেখতে হাসপাতালে আসতে পারবেন ভারতীয় কূটনীতিকরা।
সর্বজিতের আক্রমণকারীদের যাতে কড়া শাস্তি হয়, সে বিষয়ে পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। সেই সঙ্গেই ভারত এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানের জেলে বন্দি প্রত্যেক ভারতীয়র নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার দায়িত্ব পাক সরকারের। সর্বজিতের অবস্থা নিয়ে আজ ফের সুর চড়িয়েছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, সর্বজিতের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করার পুরো দায়িত্ব ভারত সরকারেরই। সর্বজিতের আরোগ্য কামনায় আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থনায়ও বসেন অনেকে। |