জমি পাননি, ফেরত আসেনি টাকাও। একই জমি একাধিক লোককে বিক্রি করা হয়েছে এমনই অভিযোগ নিয়ে দুর্গাপুরের একটি সংস্থার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন অন্ডালের এক লগ্নিকারী। সংস্থাটির একটি স্থানীয় কেব্ল চ্যানেলও আছে। ‘অ্যাক্সেস মাল্টি ডেভলপার্স লিমিটেড’ নামে ওই সংস্থা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিচারক পুলিশকে অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্ডালের ময়রা গ্রামের অজিতকুমার দাস সোমবার দুর্গাপুর আদালতে জানান, ২০০৯ সালে সংস্থারই কেব্ল চ্যানেলে কাঁকসার মলানদিঘির কাছে জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, প্রথমে ‘বুকিং’ বাবদ নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিতে হবে। বাকি টাকা দেওয়া যাবে কিস্তিতে। তিনি স্ত্রী আরতি এবং পূত্রবধূ স্নিগ্ধার নামে তিন কাঠা করে মোট ৬ কাঠা জমি নেবেন বলে ঠিক করেন।
অজিতবাবুর দাবি, প্রতি কাঠার দাম ৬৯ হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছিল। ‘বুকিং’ বাবদ চাওয়া হয় ৫৪ হাজার টাকা। ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর জমি ‘বুক’ করতে ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকার ড্রাফট জমা দেন। এর পরে গত বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি মাসে দু’টি প্লটের জন্য সাড়ে ৩ হাজার হিসাবে মোট ৭ হাজার টাকা করে চেকে কিস্তি দিয়ে এসেছেন। কিন্তু মার্চ মাস থেকে সংস্থাটি চেক নেওয়া বন্ধ করে দেয়। |
সিটি সেন্টার এলাকায় সংস্থার অফিস। —নিজস্ব চিত্র। |
অজিতবাবুর অভিযোগ, “কেন পুরো টাকা নিয়ে আমায় জমি দেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়ে কৈফিয়ত চাইতে সিটি সেন্টারে সংস্থার অফিসে গেলে ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাত্যায়ন ভট্টাচার্য আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।” তাঁর দাবি, বিজ্ঞাপনে ২২৫টি প্লটের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ৩৫০ জনের কাছ থেকে সেই জমির জন্য বুকিং ও কিস্তি নেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, “ভাবিনি, কম দামে জমি কিনতে গিয়ে এই ভাবে প্রতারকের খপ্পরে পড়ব!”
কাত্যায়নবাবু অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, “বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তবু জানাই, উনিই কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আমরা আদালতে তা জমা দেব। ২২৫ জনের নাম করে ৩৫০ জনকে জমি দেওয়ার জন্য অর্থ নেওয়ার অভিযোগও মনগড়া। জানি না, কোথা থেকে এই তথ্য তিনি সংগ্রহ করেছেন।” সংস্থার কর্মীদেরই কয়েক জন অবশ্য জানিয়েছেন, জমি কেনাবেচা এবং বাড়ি তৈরি করা ছাড়াও ভিন্ রাজ্যে শপিং মল, গয়না ইত্যাদির ব্যবসার বড় চাপ নিয়ে ফেলেছে সংস্থাটি। ২০১০ সালে আয়কর দফতর অভিযানও চালায়। মোটা জরিমানা দিয়ে রেহাই মেলে।
কাত্যায়নবাবুর সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। শহরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূলের অনেক নেতার সঙ্গেই ওঁর দহরম-মহরম আছে।’’ এর আগে একাধিক অনুষ্ঠানে তাঁকে শহরের তৃণমূল বিধায়ক তথা মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। মেয়র অবশ্য দাসবি করেন, “ওই সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগের কথা আগে শুনিনি। তাই ওঁদের অনুষ্ঠানে গিয়েছি।” এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “আদালত যেমন নির্দেশ দিয়েছে, আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।” |