সঙ্কটে লগ্নি
ভুঁইফোঁড় সংস্থায় বিক্ষোভ, ভরসা জোগাচ্ছে বড়রা
তঙ্কিত লগ্নিকারীদের টাকার কিছুটা কেটে নিয়ে বাকিটা ফিরিয়ে দিচ্ছে রোজভ্যালী। অনেক সংস্থা আবার জানিয়ে দিয়েছে, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে আমানত ফেরত দেওয়ার কোনও নিয়মই তাদের নেই। ছোট-ছোট ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা পড়েছে বেশি বিপাকে। হয় বিক্ষোভ হচ্ছে অথবা সংস্থার কর্তারা আমানতকারীদের এড়িয়ে যাচ্ছেন।
আসানসোলে একটি আর্থিক লেনদেন সংস্থা চালানোয় নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের মেয়র পারিষদ অনিমেশ দাসের। প্রশাসনিক তদন্ত ও হস্তক্ষেপ দাবি করে সম্প্রতি বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে কংগ্রেস। বাম কাউন্সিলরেরা মেয়রকে স্মারকলিপি দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। সোমবার অনিমেশবাবু অবশ্য বলেন, তিনি ওই আর্থিক সংস্থার চেয়ারম্যান ঠিকই। কিন্তু সেটি কোনও ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা নয়। তাঁর সংস্থার যাবতীয় কাগজপত্র তিনি পুলিশের কাছে জমা করেছেন।
জামুড়িয়ার এক আমানতকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে দুপুরে সারদা গোষ্ঠীর ধাদকা রোড অফিসের শাখা ম্যানেজার দেবপ্রকাশ গণকে গ্রেফতার করেছে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে সংস্থার কিছু নথিপত্রও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এ দিন দুপুরেই রূপনারায়ণপুরে ‘শাইন ইন্ডিয়া অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে এক সংস্থার অফিসে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরে তিন-চার মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। অফিস থেকে নানা জিনিসপত্রও সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। সুযোগ বুঝে হঠাৎ অফিস গুটিয়ে সংস্থাটি সরে পড়তে পারে আশঙ্কা আমানতকারীদের। পরে ওই অফিসে গিয়ে তদন্তও চালিয়েছে পুলিশ।
আমানকারীরা জানান, সকালে তাঁরা জানতে পারেন, রবিবার ওই অফিস থেকে কিছু সামগ্রী সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অফিস সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিলয় সেনচৌধুরী অবশ্য বলেন, “কিছু জিনিস আমরা অন্য শাখায় পাঠিয়েছি। এর অর্থ অফিস বন্ধ করা নয়। সামান্য কিছু সমস্যার জন্য কয়েক জন আমানতকারী টাকা পাননি। সেটাও বড় ব্যপার নয়। আমরা সবাইকে টাকা মিটিয়ে দেব।” তিনি জানান, পুলিশ তাঁদের নথিপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে। মঙ্গলবার সে সব পাঠানো হবে। এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় জানান, সরকারের নির্দেশেই অর্থলগ্নি সংস্থার কর্ণধারদের যাবতীয় নথি জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোজভ্যালী আগেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, লগ্নিকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। যাঁরা ভরসা রাখতে পারবেন না, তাঁরা টাকা তুলে নিতে পারেন। তবে স্থায়ী আমানতের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ‘ক্যানসেলেন চার্জ’ কাটা যাবে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত তারাই সব চেয়ে বেশি আমানতকারীর টাকা ফিরিয়েছে। এ দিনও দুর্গাপুরে রোজভ্যালীর অফিসের সামনে আমানতকারীদের লাইন ছিল লম্বা। বুধবার বিক্ষোভের পরেই টাকা ফেরতের আবেদনপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছিল। সেই মতো চেক দেওয়া হচ্ছে। বিকেল ৪টে নাগাদ গেট বন্ধ হওয়ার পরেও অফিসের সামনে অনেকে ছিলেন যাঁরা আবেদন জমা করতে পারেননি।
বেঙ্গল অম্বুজা এলাকার হিমাঙ্গিনি ইনফ্রাকন প্রাইভেট লিমিটেডের অফিসে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। আধিকারিক সুপ্রিয় দে বলেন, “এখন পর্যন্ত অশান্তি হয়নি। কেউ-কেউ মেয়াদ শেষের আগেই টাকা ফেরত চাইছেন। তাঁদের আবেদনপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। উপর থেকে নির্দেশ এলে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।” আমানতকারীদের ভিড় ছিল না। তবে এক এজেন্ট জানান, তাঁর কাছে যাঁরা আমানত জমা করেছিলেন, তাঁরা বেশ চাপ দিচ্ছেন। তিনি সে কথা অফিসেও জানিয়েছেন।
বেঙ্গল অম্বুজা এলাকার অন্য প্রান্তে এমপিএস গ্রিনারি সংস্থার অফিসে গেট খোলা হচ্ছে কেবল আমানতকারী ও এজেন্টদের জন্য। আর কারও প্রবেশ নিষেধ। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বছরখানেক আগে ডাকাতির পর থেকে এই নিয়ম। সংস্থার সহকারী ম্যনেজার সুদীপ বর্ধনের দাবি, মেয়াদ শেষের আগে আমানত তুলে নেওয়ার আর্জি নিয়ে সামান্য কিছু গ্রাহক এসেছিলেন। কিন্তু তাঁদের আশ্বাস পেয়ে মত পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, “কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমের নিয়ম অনুযায়ী ৯০ শতাংশ অর্থ স্থায়ী সম্পদ তৈরির কাজে ব্যয় করতে হয়। আমরা সেই নিময় মেনে চলি। গ্রাহকেরা স্পষ্ট ভাবে সেই সব স্থায়ী সম্পদের হাল হকিকত জানেন।”
বেনাচিতির ভিড়িঙ্গি মোড়ে অ্যাসপেন গ্রুপের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই টাকা ফেরত চাইছেন অনেক আমানতকারী। ম্যানেজার সুখদেব দাস অবশ্য জানান, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে গ্রাহককে টাকা ফেরত দেওয়ার নিয়ম তাঁদের নেই। ভিড়িঙ্গিতেই অ্যালকেমিস্ট সংস্থার অফিসে আবার চোখে পড়েছে উল্টো চিত্র। কাদা রোড এলাকা থেকে শান্তিময়ী দাস এসেছেন আমানত জমা দেবেন বলে। পরিচারিকার কাজ করেন। কত টাকা লগ্নি করবেন সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা নেই। এজেন্টের ভরসায় বসে আছেন। তিনি বলেন, “আমায় আসতে বলা হয়েছে। আজ সব খোঁজ পাব।” হেমাঙ্গ ভট্টাচার্য নামে এক এজেন্ট দাবি করেন, ১৯৮১ সাল থেকে ওই সংস্থা ব্যবসা করছে। কেউ প্রতারিত হননি। তাই সারদা কাণ্ডের পরেও মানুষ ভরসা রাখছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.