|
|
|
|
দেবযানীকে রাজসাক্ষী করা নিয়েও ধন্দে পুলিশ |
ম্যাডাম কি এখনও স্যারের ছকেই চলছেন
সোমা মুখোপাধ্যায় |
জেরায় সারদা গোষ্ঠীর ‘ম্যাডাম’ দেবযানী মুখোপাধ্যায় যা বলছেন, তা ‘সেন স্যার’ সুদীপ্ত সেনের-ই শেখানো বুলি কি না, তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন তদন্তকারীরা। তাই শেষ পর্যন্ত দেবযানী এই মামলার রাজসাক্ষী হতে রাজি হলেও পুলিশ কী করবে তা নিয়ে সংশয় দানা বেঁধেছে তদন্তকারীদের একাংশের মনে। তাঁদের মনে হয়েছে, এটাও সুদীপ্তরই চাল হতে পারে।
কাশ্মীর থেকে এই জুটিকে কলকাতায় আনার সময়ে তাঁদের পরস্পরের মধ্যে সামান্য যে কথোপকথন হয়েছে এবং তার পরে দেবযানী জেরার সময়ে যা যা বলেছেন তা পাশাপাশি রেখে তদন্তকারীদের মনে এই সন্দেহই ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে। তাই দেবযানীর প্রতিটি বক্তব্য বার বার যাচাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী দলের এক সদস্য। রবিবার তিনি জানান, সারদা সংস্থার নানা পর্যায়ের বর্তমান এবং প্রাক্তন কর্মীকে দিয়ে দেবযানীর বক্তব্য যাচাই করে দেখতে চাইছেন তাঁরা।
সোনমার্গের হোটেল থেকে ধরা পড়ার পর থেকে কলকাতা আনা পর্যন্ত বেশ কয়েক বার ইশারায় দেবযানীর সঙ্গে সুদীপ্তর কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা থেকে কাশ্মীর যাওয়া তদন্তকারী দলের এক সদস্য। তিনি বলেন, “ সুদীপ্ত ও দেবযানী, দু’জনেই বুঝতে পেরেছিলেন যে শেষ পর্যন্ত তাঁরা ধরা পড়ে যাবেন। তাই পুলিশের জেরায় দু’জনে কী বলবেন সম্ভবত সেটাও তাঁরা কাশ্মীরে বসেই ঠিক করে নিয়েছিলেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে। জেরায় দেবযানী যা বলছেন তা শেখানো বুলি বলেই মনে হচ্ছে। সোনমার্গ থেকেই ওঁদের দু’জনকে লক্ষ্য করছি তো! ” |
|
গ্রেফতারের পরে সুদীপ্ত ও দেবযানী। —ফাইল চিত্র |
কলকাতা থেকে কাশ্মীর যাওয়া তদন্তকারী দলের এক সদস্যের বয়ান অনুযায়ী, দিল্লিতে কলকাতাগামী বিমানের জন্য অপেক্ষা করার সময়ে আচমকাই অধৈর্য্য হয়ে উঠেছিলেন দেবযানী। কিছুটা দূরে পুলিশ পরিবেষ্টিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুদীপ্ত সেনের দিকে তাকিয়ে খানিকটা স্বগতোক্তির মতো করে বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ লস্ট এভরিথিং, ইনক্লুডিং হোপ। (আমি সব হারিয়েছি, আশাটুকু পর্যন্ত)’। কথা শেষ করার সময়ে তাঁর গলা ধরে এসেছিল বলে এক পুলিশকর্মী জানিয়েছেন। তিনি যে এই জাল থেকে বেরনোর আর কোনও রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছেন না, দেবযানীর ওই কথায় সেটাই স্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছিল তদন্তকারীদের চোখে।
এই সময়ে সুদীপ্ত সেনের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
তদন্তকারী দলের সঙ্গে থাকা পুলিশকর্মীটি বলেন, “গোড়ায় খানিকটা থতমত খেয়ে যান সুদীপ্ত। কয়েক পলক দেবযানীর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেন। কিন্তু বিমানে ওঠার সময়ে নীচু স্বরে তিনি দেবযানীকে বলেছিলেন, “এ টু জেড আমি। মাইন্ড ইট।” অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে দেবযানী সেন স্যারকে জড়িয়ে দেবেন এমনটাই ঠিক হয়েছিল দু’জনের মধ্যে।” বন্দি দশায় ওটাই দেবযানীর সঙ্গে সুদীপ্তর শেষ কথোপকথন। কাশ্মীরে যাওয়া পুলিশ কর্মীটি জানিয়েছেন, উড়ানের এবং দমদমে নামার পরেও দেবযানীকে দেখে কয়েক বার মাথা নেড়েছেন সুদীপ্ত। যা যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী।
গ্রেফতার হওয়ার পরে সুদীপ্ত, দেবযানী ও অরবিন্দ চৌহানকে রাখা হয়েছিল গান্ডেরবাল পুলিশ লাইনে। কলকাতা থেকে তিন পুলিশ কর্মী তাঁদের আনার জন্য রওনা হন। পুলিশ সূত্রে খবর, সোনমার্গ থেকে ওই তিন জনকে কলকাতায় নিয়ে আসেন এক-মহিলা সহ ন’জন পুলিশের একটি দল। দলের এক জন বলেন, “কারা, কারা ধরা পড়েছে সেটা তো জানতামই। তবু নিয়মমাফিক গান্ডেরবাল পুলিশ লাইনে পৌঁছে ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করতে হয়েছিল, আপনার নাম কী? সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে তিনি উত্তর গিয়েছিলেন, আমিই দেবযানী। আগাগোড়াই কঠিন মুখে বসেছিলেন তিনি।” বিমানে দু’দিকে জানলার ধারে বসানো হয়েছিল দেবযানী ও সুদীপ্তকে। মাঝেমধ্যেই দেবযানীর দিকে দেখছিলেন সুদীপ্ত। চোখের ইশারায় কথা হয়েছে দু’জনের মধ্যে।
কলকাতা থেকে কাশ্মীর যাওয়া এক পুলিশ জানান, ধরা পড়ার পরে একটা ফোন করতে চেয়েছিলেন সুদীপ্ত। স্বাভাবিক ভাবেই সেই অনুমতি তাঁকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু সেই সময়ে সুদীপ্ত ও দেবযানীর কথোপকথন থেকে তাঁদের মনে হয়েছিল, দেবযানীর কোনও বোনকে ফোনটি করার কথা হয়েছিল। কলকাতায় দেবযানীর বোন বৃহস্পতিবার দাবি করেছিলেন, দিদিকে ফাঁসানো হয়েছে। সেই দাবি এবং সুদীপ্তর দেবযানীর বোনকে ফোন করতে চাওয়ার মধ্যে তাই যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। তাতেই তাঁদের মনে হচ্ছে, কোথায় কাকে কী বলতে হবে, তা আগে থেকেই সম্ভবত ছক করা আছে।
|
পুরনো খবর: বেতন নিতেন না স্যার, খরচের ভার ম্যাডামের |
|
|
|
|
|