সারদা সংস্থার মিডিয়া গ্রুপের সিইও এবং তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার ছ’দিন পর মামলা রুজু করেছে ভবানীপুর থানার পুলিশ। সারদা সংস্থার বন্ধ হয়ে যাওয়া ইংরেজি ‘বেঙ্গল পোস্ট’ ও বাংলা ‘সকালবেলা’ সংবাদপত্রের সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের একাংশ ভবানীপুর থানায় কুণালের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ দায়ের করেন গত ২০ এপ্রিল। অথচ ভবানীপুর থানায় মামলা রুজু হয় ২৬ এপ্রিল রাতে (কেস নম্বর ১৯৮)। শাসক দলের সাংসদ বলেই পুলিশ প্রথমে মামলা রুজু করতে এত দিন সময় নিল এবং তার পর প্রশাসনের শীর্ষমহল থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই পদক্ষেপ করল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই দু’টি দৈনিকের সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের অধিকাংশের আড়াই মাসের বেতন বকেয়া। কেউ কেউ বেতন পাননি তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে। সাংবাদিকদের ওই অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ২০১১-র সেপ্টেম্বর থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডে সংস্থা কর্তৃপক্ষ টাকা জমা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন, তাঁদের বেতন থেকে আয়কর বাবদ অর্থ কাটা হলেও সেই অর্থ আয়কর বিভাগে জমা পড়েনি। কুণালের পাশাপাশি একই অভিযোগ করা হয়েছে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধেও।
লালবাজারের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, “এ ক্ষেত্রে অভিযোগ জমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মামলা রুজু করার কথা। কিন্তু সেটা কেন করা হল না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এক তদন্তকারী অফিসার অবশ্য বলেন, “যে-সমস্ত অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলির তদন্ত পুলিশের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে কি না, সেটা দেখা হচ্ছিল। সব দিক খতিয়ে দেখার পরেই মামলা রুজু করা হয়েছে।” তবে পুলিশ সূত্রের খবর, পার্ক স্ট্রিট থানায় কুণালের বিরুদ্ধে চ্যানেল টেন-এর সাংবাদিকদের দায়ের করা অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বৃহস্পতিবার মামলা রুজু করা হয়।
তৃণমূলের অন্দরেও কুণালকে কেন্দ্র করে বিতর্ক বাড়ছে। দলীয় নেতাদের একাংশের অভিমত, কুণালকে দ্রুত তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। সেই সঙ্গে থানায় কুণালের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ হয়েছে তার ভিত্তিতে পুলিশ-প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করুক বলে ওই নেতাদের অনেকেই মনে করেন। এ ক্ষেত্রে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী (যিনি পুলিশ মন্ত্রীও বটে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা নিয়ে দলে জল্পনাও রয়েছে। দলের এক প্রবীণ নেতার মতে, “কবীর সুমন বা শিখা মিত্রর ক্ষেত্রে দল যেমন নীরবতা অবলম্বন করেছে, এ ক্ষেত্রে তা করা যাবে না। কুণালের নাম সারদা-কান্ডে জড়িয়েছে। ফলে, এ ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।”
দলনেত্রীর নির্দেশ পেলেই তিনি সাংসদ পদে ইস্তফা দিতে প্রস্তুত বলে কুণাল অবশ্য শুক্রবারই মমতাকে চিঠি দিয়েছেন। এ দিন প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চিঠির ব্যাপার আমার জানা নেই। যাঁকে উনি চিঠি পাঠিয়েছেন, তিনিই বলতে পারবেন। তবে আমি তো আগেই বলেছি, যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়, তার বিচার হবে। কেউ ছাড় পাবেন না।”
এই ব্যাপারে শাসক দলকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধী বামফ্রন্টও। এ দিন ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান, কুণাল যে সাফাই দিন, তিনি এই কেলেঙ্কারির দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না। বিমানবাবু বলেন, “ওঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। পুলিশের অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দাবি করে ফ্রন্টের বৈঠকের পরে বিমানবাবু বলেন, “যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ওড়িশা, ঝাড়খন্ডের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতারিত হয়েছেন, তাতে নিরপেক্ষতা রক্ষা করে একমাত্র সিবিআই-এর পক্ষেই তদন্ত করা সম্ভব।”
|