সারদা কাণ্ডের পরে একই ধরনের কারবারে যুক্ত অন্যান্য সংস্থাগুলি থেকে টাকা তুলে নেওয়ার জন্য আমানতকারীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শুক্রবার শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্স, নানা এলাকায় একাধিক সংস্থার অফিসে ভিড় উপচে পড়ে। হলদিবাড়িতে বন্ধ হয়ে যাওয়া কয়েকটি সংস্থার অফিসের সামনে টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা। শিলিগুড়িতে অ্যানেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের শিলিগুড়ি বাঘাযতীন পার্ক কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সমস্ত জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ। বিকেলে অফিস থেকে ৯টি কম্পিউটার, একটি স্ক্যানার, একটি প্রিন্টার, একটি বিলিং মেশিন এবং যাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অথচ প্রাপ্য টাকা পাননি তাদের নথি ও শংসাপত্র। এই কাজে পুলিশকে সাহায্য করেন এই শাখার দায়িত্বে থাকা বাসন্তী চৌধুরি। সমস্ত জিনিস বাজেয়াপ্ত করার পর কার্যালয়টি আপাতত সিল করে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
শিলিগুড়িতে রোজভ্যালী সংস্থার দফতরেও পাঁচ শতাধিক আমানতকারী তাঁদের জমানো আট লক্ষাধিক টাকা ফেরতে চেয়ে আবেদন করেন। সংস্থার আঞ্চলিক ম্যানেজার মাজিদুল ইসলাম বলেন, “যে টাকা ফেরত চাইছেন, তাঁকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। আমরা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। সতেরো বছর ধরে সংস্থা চলছে। আমানতকারীদের ফেরানো হবে না।”
ওই সংস্থায় প্রায় ২৫ হাজার আমানতকারী রয়েছেন। প্রতি মাসে প্রায় ২ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এ ছাড়াও উত্তরবঙ্গে এরকমই আরও প্রায় ৭৫টি শাখা রয়েছে। আমানতকারীদের অভিযোগ, সংস্থার পক্ষ থেকে নোটিস টাঙিয়ে বলা হয়েছে, মেয়াদ ফুরনোর আগে টাকা তুলে নেওয়া দশ শতাংশ থেকে শুরু করে সময় হিসেবে টাকা কেটে নেওয়া হবে। তা মানতে নারাজ অনেক আমানতকারী।
এনজেপির বাসিন্দা পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রণয় রায় বলেন, “দু’বছরের জন্য ৭০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এক বছর হয়ে এসেছে। সারদা কাণ্ডের পর আর টাকা রাখতে সাহস হচ্ছে না।” শাখা ম্যানেজার মাজিদুলবাবু দাবি করেছেন, অনেক আমানতকারী তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন। তিনি বলেন, “গত তিনদিনে পাঁচ হাজারের উপরে উপরে আমানতকারী ভিড় করেছেন। অনেককে বোঝানোর পর তাঁরা মেনে নিয়েছেন। আর টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়টি এখনও পাকা হয়নি। ফের বৈঠকে ওই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।”
ডুয়ার্সের বারবিশা কামাখ্যাগুড়ি এলাকার অনেক সংস্থায় আগাম টাকা তোলার আবেদন জমা দিতেও ভিড়। এদিন ৩০০ এর বেশি গ্রাহক আবেদন জমা দেন। আলিপুরদুয়ারের ভারপ্রাপ্ত মহকুমা শাসক শিশির লেপচা জানান, তাঁরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন।
কোচবিহারের দিনহাটা রোডে একটি সংস্থার অফিস থেকে নথিপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা। অফিসে ওই ঘটনা ঘটে বিষয়টি জানাজানি হতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আমানতকারী এজেন্টের একাংশের পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দারা সেখানে ছুটে যান। আটক করা হয় অফিসের সামনে দাঁড় ট্রাক। খবর পেয়ে যান কোচবিহারের মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা। প্রশাসনের তরফে ওই সংস্থার অফিসের একটি ঘরে আটক নথি সিল করে রাখা হয়। ওই সংস্থার কর্ণধার অর্চনা সরকারের দাবি, অফিসে জায়গার অভাবে অপ্রয়োজনীয় কিছু পুরানো কাগজপত্র বাড়িতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়। তিনি বলেন, “ট্রাক দেরিতে আসায় ভুল বোঝাবুঝি হয়। প্রশাসন সেসব দেখে একটি ঘরে রেখেছে। তাঁরাও জানেন ও সব গুরুত্বপূর্ণ নথি নয়। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে একটি মহল বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য আমরা টাকার বস্তা নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছি বলে প্রচার করে। কোনও আমানতকারীর টাকা মার যাবে না। আগামী ১ জুন থেকে ওই টাকা মেটানো কাজ শুরু করা হবে।”
|