পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কথা বলতে গিয়ে ‘সিএপিএফ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নোটে। কেন এবং কী অর্থে তিনি শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে তা জানতে চেয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ডিজি-র নোটে ব্যবহৃত ওই শব্দটি নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা দু’রকম ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। সেই জন্যই বিচারপতি সরাসরি ডিজি-র কাছ থেকে এর ব্যাখ্যা জানতে চান। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ভোট নিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন কমিশনের কাছে। সেই রিপোর্টের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয়েছিল রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের ওই নোট। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ডিজি-র বক্তব্য হাইকোর্টকে জানিয়ে দেবেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়। মামলার শুনানিতে কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পালের বক্তব্য ছিল, সিএপিএফ মানে ‘সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স’। অর্থাৎ এটা কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী। রাজ্য সরকার যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিরোধী, সেখানে রাজ্যেরই ডিজি তাঁর নোটে সিএপিএফের কথা লিখেছেন। এতে পরিষ্কার, ডিজি-র নোট আর রাজ্যের বক্তব্যের মধ্যে ফারাক রয়েছে। কিন্তু সরকারি কৌঁসুলি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সিএপিএফ ‘ক্যালকাটা আর্মড পুলিশ ফোর্স’। অর্থাৎ কলকাতা সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। দু’জনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ‘সিএপিএফ’ আসলে একটি শব্দ নয়, চারটি ইংরেজি শব্দের আদ্যক্ষরের সমষ্টি। কিন্তু সেই চারটি পূর্ণাঙ্গ ইংরেজি শব্দ কী কী, মতভেদ তা নিয়েই।
সবিস্তার ব্যাখ্যায় অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমলবাবু বলেন, সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স মানে বিএসএফ (সীমান্ত রক্ষী বাহিনী), সিআইএসএফ (কেন্দ্রীয় শিল্প সুরক্ষা বাহিনী), সিআরপিএফ (কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স), আইটিবিপি (ইন্দো টিবেটান সীমান্ত বাহিনী), এসএসবি (সশস্ত্র সীমা বল) এবং ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড (জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী)-এর মিলিত বাহিনী। এই ছ’টি বাহিনী নিয়েই সিএপিএফ। তাঁর যুক্তি, ডিজি-র নোটে সিএপিএফ বলতে নিশ্চয়ই ওই ছ’টি বাহিনীর কথা বলা হয়েছে। অ্যাডভোকেট জেনারেলের দাবি, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অনেক ভাল। এটা শুধু রাজ্য সরকারের দাবি নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের রিপোর্টেই ২০১২-’১৩ সালের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক ভাল বলে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যের চারটি জেলা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া মাওবাদী প্রভাবিত। এখন ওই চার জেলায় মাওবাদীদের প্রভাব কমেছে। কোনও হিংসাত্মক ঘটনা নেই। ব্যাপক হারে উন্নয়ন হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। ওই চার জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে-হেতু ভাল, তাই রাজ্য পুলিশ দিয়েই নির্বাচন করানো যাবে বলে মনে করে সরকার। দার্জিলিং পাহাড় এলাকায় কিছু সমস্যা ছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে পাহাড়ের কোনও সম্পর্ক নেই।
অ্যাডভোকেট জেনারেলের এই বক্তব্য বিচারপতি সমাদ্দারকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কোন পরিস্থিতিতে এবং কেন ডিজি তাঁর নোটে সিএপিএফ কথাটির উল্লেখ করেছেন, তার সবিস্তার ব্যাখ্যা চান তিনি। পরবর্তী শুনানিতে ডিজি-র সেই ব্যাখ্যা পেশ করতে হবে বিমলবাবুকে।
|