|
|
|
|
পঞ্চায়েত মামলায় রাজ্যকে পরামর্শ |
ভোট-কর নেওয়ার কথা ভাবুন, বলল কোর্ট
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
একেই টানাটানির সংসার। তার উপরে কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে হলে সেই বাড়তি খরচ সামলানো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে কঠিন হবে বলে মনে করছে রাজ্য। আর সরকারের প্রতিনিধির মুখে এই যুক্তি শুনে হাইকোর্টের পরামর্শ, নির্বাচনের খরচ তুলতে ভোট-কর বসানো যায় কি না, রাজ্য তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুক।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন বনাম রাজ্য সরকারের মামলায় সওয়াল করতে গিয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বিমল চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, চলতি আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আয়োজন করতে হয়, তা হলে বাড়তি অর্থের সংস্থান করাটা সরকারের পক্ষে বেশ কষ্টকর হবে। এজি’র বক্তব্য শুনে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার বলেন, “সংবাদ মাধ্যমে তো প্রতি দিনই নানা কর বসানোর খবর দেখা যায়। অবাধ, মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাটাই যেখানে রাজ্য ও কমিশনের লক্ষ্য, তখন ভোট-কর বসিয়ে রাজ্য টাকা জোগাড় করতে পারে।”
প্রসঙ্গত, বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, সারদা-কাণ্ডে প্রতারিত দুঃস্থ আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পাঁচশো কোটি টাকার তহবিল গড়া হবে। আর তার জন্য রাজ্য তামাকে ১০% কর বসিয়ে তুলবে দেড়শো কোটি। মহাকরণে দাঁড়িয়ে মমতা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের আর্থিক সঙ্কটের কারণেই কর বসিয়ে তহবিলের টাকা জোগাড় করতে হচ্ছে।
এবং মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণার প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের এ দিনের মন্তব্যের মধ্যে ‘তাৎপর্য’ খুঁজে পাচ্ছেন আইনজীবী মহলের একাংশ। উপরন্তু বিচারপতি এ দিন এ-ও পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, ভোট আয়োজনের জন্য কর বসলে তা আদায়ের ভার নিতে হবে রাজ্যকে, কমিশনকে নয়। “কমিশন তো মানুষের ঘরে-ঘরে গিয়ে নির্বাচনের টাকা জোগাড় করবে না! রাজ্যকেই ব্যবস্থা করতে হবে।” বললেন বিচারপতি সমাদ্দার। এজি অবশ্য বলেন, এমন কোনও কর আরোপের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের আদৌ আছে কি না, তা খতিয়ে ভাল ভাবে দেখতে হবে।
বস্তুত, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কমিশন-রাজ্য সংঘাত এখন অনেকটা কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের প্রশ্ন ঘিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কমিশনের কৌঁসুলি সমরাদিত্য পালের সওয়াল শেষ হওয়ার পরে এ দিন জবাব দিতে শুরু করেছিলেন এজি। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের অনেক কিছুর অভাব রয়েছে, টাকারও টানাটানি। অথচ কমিশন গোড়া থেকেই ক্ষমতা জাহির করতে আটশো কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর কথা বলছে। কিন্তু এত কেন্দ্রীয় বাহিনীর দরকার কেন, কমিশনের তরফে তা স্পষ্ট করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এজি।
পাশাপাশি পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গে যাবতীয় সিদ্ধান্ত রাজ্য একতরফা নিয়েছে বলে কমিশনের যে অভিযোগ, তা মানতে চাননি বিমলবাবু। তাঁর দাবি, নানা বিষয়ে উভয় পক্ষে আলোচনা হয়েছে। এখন এজি’র প্রশ্ন, আটশো কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগবে, কমিশন কীসের ভিত্তিতে এ কথা বলছে?
বিচারপতির কাছে এজি’র আক্ষেপ, “কমিশন রাজ্যের বাস্তব অবস্থাটা বিবেচনা করছে না। আটশো কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে জোরাজুরি করে যাচ্ছে!” আদালতের কাছে বিমলবাবুর আর্জি, পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা করে রাজ্য সরকার এ পর্যন্ত যে সব বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, সেই সব দিনে নির্বাচন করা আর সম্ভব নয়। তাই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সওয়াল-জবাবে সময় নষ্ট না-করে অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা চলুক।
আজ, শুক্রবার মামলার ফের শুনানি।
|
পুরনো খবর: দিন নিয়ে আপত্তি, কমিশন অনড় কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রশ্নেও |
|
|
|
|
|