প্রাথমিক স্কুলের ৩৫ হাজার শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষায় (টেট) ৪৫ লক্ষ প্রার্থীর লড়াইয়ে ছিলেন তিনিও। বাদুড়ঝোলা ভিড়ের ট্রেনে ঝুলতে ঝুলতে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন রিতা দাস। মৃত্যুর সঙ্গে ২৫ দিন লড়াইয়ে চালিয়ে হেরে গেলেন। বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে রিতার পরিবার। এ দিন ওই পরিবারের লোকজন পিজি-তে দাঁড়িয়ে বলেন, এসএসকেএমে ভর্তির পর থেকে রিতার ঠিকমতো চিকিৎসা হয়নি। খুলি ফেটে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু হাসপাতালে তার কোনও রকম চিকিৎসা হয়নি। রিতার পরিবারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানান, চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়ায় তাঁর দেহে গুরুতর আঘাত ছিল। মাথায় ছিল গুরুতর চোট। সেই অবস্থাতেও তাঁকে সারিয়ে তোলার জন্য এত দিন যথাসাধ্য চেষ্টা চলছিল। কিন্তু তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
৩১ মার্চের ওই নিয়োগ পরীক্ষায় অনেক প্রার্থীই ঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি। সড়কপথে যোগাযোগের যথেষ্ট বাড়তি ব্যবস্থা ছিল না। রেলের বিরুদ্ধেও অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছিল। বহু স্টেশনে বিক্ষোভ-ভাঙচুর হয়। তবে রেল জানায়, রবিবার হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবেই সে-দিন কাজের দিনের সূচি মেনে ট্রেন চালানো হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, বাঁধভাঙা ভিড়ে উপচে পড়ে সব ট্রেনই।
সোনারপুর আচার্য প্রফুল্লনগরের বাসিন্দা রিতা দাস লক্ষ্মীকান্তপুর ঘোলা হাইস্কুলে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য সোনারপুর থেকে ট্রেনে চাপেন। কিন্তু বারুইপুর থেকে এক বান্ধবীকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য ওই স্টেশনে নেমে যান। তার পরে বান্ধবীর সঙ্গে বারুইপুর থেকে কোনও মতে লক্ষ্মীকান্তপুরের ট্রেনে ওঠেন। কিন্তু ট্রেনের ভিতরে ঢুকতে পারেননি। ঝুলতে ঝুলতে যাচ্ছিলেন। বারুইপুর ও শাসন স্টেশনের মাঝখানে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যান রিতা। মাথায় তো বটেই, চোয়াল এবং শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও গুরুতর চোট লাগে। রিতাকে প্রথমে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাঁকে পাঠানো হয় এসএসকেএমে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই পরীক্ষার্থীর খুলিতে চিড় ধরেছিল। চোয়ালে সেলাই পড়ে ১৭টি। প্রথম ১৪ দিন আইসিসিইউ-এ রাখা হয় তাঁকে। পরে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। বিভিন্ন ক্ষতস্থান থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল শরীরের অন্যান্য অংশেও।
|