সারদা-কাণ্ডে রাজ্য সরকার গঠিত তদন্ত কমিশন শুক্রবার কাজ শুরু করল। জনগণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামলকুমার সেনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের ওই কমিশন গঠন করা হয়েছে। এ দিন সেখানে প্রথম অভিযোগ জমা দিলেন মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা বিশাল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “কাগজে পড়ে জানলাম কমিশনে গেলে সুরাহা হবে। তাই এলাম।”
পেশায় গাড়িচালক বিশালবাবু সারদা গোষ্ঠীর অর্থলগ্নি সংস্থায় মাসে ১৬০০ টাকা করে জমা দিয়ে এসেছেন। ১৫ মাসের মেয়াদ শেষে আগামী মে মাসে ম্যাচিওরিটি বাবদ তাঁর ২৮ হাজার টাকা পাওনা হয়। কিন্তু সংস্থা পাততাড়ি গোটানোয় এখন তাঁর মাথায় হাত পড়েছে।
বাড়ির কাছে এক ডাক্তারের চেম্বারের কম্পাউন্ডার তাঁকে বেশি সুদে টাকা পাওয়ার এই স্কিমের কথা বলেছিলেন বলে বিশালবাবু জানান। তাঁর কথায়, “সরকারি ব্যাঙ্কের থেকে বেশি সুদ পাব, এই আশায় মাসে ১৬০০ টাকা করে জমা দিতে শুরু করি। আমাকে বলা হয়, ১৫ মাস ধরে রাখার পর ২৮ হাজার পাব। অর্থাৎ, ২৪ হাজার রাখলে ৪ হাজার বেশি মিলবে। সেই লোভই কাল হল।”
মুখ্যমন্ত্রী কর বসিয়ে তাঁদের মতো গরিব লগ্নিকারীদের টাকা ফেরতের আশ্বাস দিলেও তাতে ভরসা করছেন না বিশালবাবু। তাঁর প্রশ্ন, “লাখ লাখ লোকের কোটি কোটি টাকা কী করে দেবে সরকার? ওই তহবিল থেকে কিছু পাওয়ার আশা করছি না।”
শ্যামলকুমার সেন |
এ দিন কমিশনের কাজের শুরুতে হাজির ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, অর্থসচিব-সহ পদস্থ আধিকারিকেরা। শ্যামলবাবু জানান, এ দিন একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। বিশালবাবু কার মাধ্যমে কী ভাবে সারদা গোষ্ঠীর অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা জমা করেছিলেন, তার খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।
ঘটনাচক্রে কমিশন কাজ শুরুর প্রথম দিনেই যদিও শ্যামলবাবুকে নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি অন্য একটি ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার অনুষ্ঠানে শ্যামলবাবু হাজির ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীদের একাংশ।
এই প্রসঙ্গে শ্যামলবাবু বলেন, “কেউ আমন্ত্রণ করলে আমি তো যাই। সে ভাবেই গিয়েছি। অনুষ্ঠানটি সমাজসেবামূলক ছিল। ওই ধরনের অনুষ্ঠানে যে কেউ ডাকলেই আমি যাই। যাওয়ার আগে তো বলতে পারি না, আপনি কী করেন? টাকা খাটান কি না?”
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, “এখন তো ওই ধরনের ভুঁইফোড় সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের শীর্ষে আপনি। অস্বস্তি হচ্ছে না?”
শ্যামলবাবুর জবাব, “আমি আমার বিবেকের কাছে পরিষ্কার। তাই তেমন কোনও অস্বস্তি নেই। তবে ভবিষ্যতে কোনও অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে পুলিশের মাধ্যমে খোঁজখবর নেব।”
|