আক্ষেপ প্রশাসনের অন্দরে
তদন্ত-ব্যুরো নিধিরাম, ঠুঁটো আর্থিক অপরাধ শাখাও
খাতায়-কলমে নাম আছে, কিন্তু ক্ষমতা নেই। নেই উপযুক্ত পরিকাঠামো কিংবা লোকবল। ফলে পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক অপরাধ সংক্রান্ত তদন্তের জন্য কংগ্রেস ও বাম আমলে ঘটা করে যে দু’টো আলাদা আলাদা শাখা তৈরি হয়েছিল, এখন তা কার্যত নখদন্তহীন।
সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে রাজ্যের আর্থিক অপরাধের ছবিটা আবার সামনে এসেছে। প্রকট হয়েছে সেই অপরাধ দমনে নিয়োজিত অফিসারদের অসহায় অবস্থাটা। বস্তুতই তাঁরা যেন ‘ঢাল-তরোয়ালহীন’ নিধিরাম সর্দার। অর্থ দফতরের একাংশের মতে, সদিচ্ছা থাকলে এখনও ওঁদের ঠিকঠাক কাজে লাগানো যায়। কিন্তু তা আদৌ হবে কি না, সে সম্পর্কে সংশয় রয়েছে দফতরের অন্দরে।
অর্থ-সূত্রের খবর: ১৯৭৩-এ, রাজ্যের তদানীন্তন কংগ্রেস জমানায় আর্থিক অপরাধ সংক্রান্ত তদন্ত চালাতে গড়া হয়েছিল ‘ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন।’ পরবর্তী কালে বামফ্রন্টের অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র তাকে কলেবরে ও ক্ষমতায় আরও বাড়িয়েছিলেন। সঞ্চয়িতা-কাণ্ডের তদন্তভারও ব্যুরোর হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনার তদন্ত করেছেন ব্যুরোর অফিসারেরা। কিন্তু ক্রমে তার ক্ষমতা সঙ্কুচিত হতে থাকে, কমতে থাকে গুরুত্ব। “প্রথমে এই শাখা সরাসরি অর্থ দফতরের অধীনে ছিল। বাম আমলের শেষের দিকে এটিকে বাণিজ্য-কর বিভাগের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়।” জানাচ্ছেন অর্থ দফতরের এক অফিসার।
বর্তমানে ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের কাজ শুধু ‘ভ্যাট’ সংক্রান্ত ঘটনার তদন্ত করা। তা-ও সে ক্ষেত্রে অনেক সময়ে তাদের পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়।
প্রায় একই ভাবে ঠুঁটো হয়ে রয়েছে ‘ইকনমিক অফেন্স উইং।’ আর্থিক অপরাধ দমনের জন্য বাম আমলের শেষাশেষি অর্থ দফতর এই নতুন শাখাটি চালু করে। অসীম দাশগুপ্ত তখন অর্থমন্ত্রী। উইংয়ের নেতৃত্বে আনা হয় প্রাক্তন পুলিশকর্তা নারায়ণ ঘোষকে। অর্থ সূত্রের খবর: তেমন কোনও দায়িত্ব বা লোকবল না-থাকলেও নজরদারির ক্ষেত্রে এটি বেশ কিছু কাজ করেছিল। অনেকে এখানে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ করেছেন, বেশ কিছুর প্রতিকারও হয়েছে। অসীমবাবু জানান, ইকনমিক অফেন্স উইংয়ে জমা পড়া প্রায় আড়াই হাজার অভিযোগের সুরাহা করা হয়েছিল। উইংয়ের এক কর্তার দাবি, “নালিশ জমা পড়ার পরেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ডাকা হতো। প্রায় সব ক্ষেত্রেই সংস্থা অভিযোগকারীদের পাওনা মিটিয়ে দিত।”
কিন্তু সময়ের ফেরে এটিও কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অর্থ-সূত্রের খবর: নারায়ণবাবু উইংয়ের দায়িত্বভার ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এখন উইংয়ের কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটের অফিসে বসেন হাতেগোনা কয়েক জন কর্মচারী। আর্থিক অপরাধ দমনের লক্ষ্যে গঠিত দুই বিভাগের এ হেন পঙ্গুত্বপ্রাপ্তিতে আক্ষেপ প্রকাশ করে অর্থ-কর্তাদের একাংশ বলছেন, সরকার চাইলে ইকনমিক অফেন্স উইংকে শক্তিশালী করে চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগাতে পারত। পাশাপাশি যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা নিতে পারত ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনও। কী ভাবে?
ব্যুরোর এক কর্তার ব্যাখ্যা: ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলোর অধিকাংশই ‘গ্রুপ অফ কোম্পানিজ’ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। অর্থ লগ্নির কারবারের পাশাপাশি নানা ধরনের পণ্য উৎপাদন সংস্থাও ফেঁদে বসে। যেমন সারদা গোষ্ঠী কিনেছিল মোটরবাইক কারখানা, কৃষিজ পণ্যের কারখানাও ছিল তাদের নামে। এখানে ব্যুরোকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা ছিল। “সংস্থাগুলো ঠিকমতো ব্যবসা করছে কি না, ভ্যাট দিচ্ছে কি না, ব্যুরোকে সে সব নিয়ে খোঁজ-খবর করতে দিলে প্রতারণার জাল হয়তো অনেক আগেই ফাঁস হয়ে যেত।” মন্তব্য ওই কর্তার।
এবং আর্থিক অপরাধ ঠেকাতে এই ধরনের পদক্ষেপের অবকাশ এখনও রয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। তাঁর বক্তব্য, “এখনও গ্রামে-গঞ্জে এমন কিছু ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা রয়ে গিয়েছে, খাতায়-কলমে যাদের উৎপাদন-ব্যবসাও রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিলে অদূর ভবিষ্যতে বিপর্যয় আটকানো সহজ হতে পারে।”
এত দিন খোঁজ নেওয়া হয়নি কেন? অর্থ দফতরের একাংশের দাবি: এ ব্যাপারে প্রশাসনের শীর্ষ মহলের নির্দেশ মেলেনি। তবে তাঁরা স্বীকার করছেন, ব্যুরো বা উইংয়ের বাইরেও আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধে যে ধরনের পরিকাঠামো থাকা দরকার (বিশেষত নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের জন্য পৃথক গোয়েন্দা-বাহিনী), পশ্চিমবঙ্গে তার খামতি চোখে পড়ার মতো।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.