সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, কয়লা বণ্টন নিয়ে সিবিআই তদন্ত কতটা এগোলো বন্ধ খামে তা জানাতে হবে হবে আদালতে। যাতে নিরপেক্ষ হয় তদন্ত এবং সকলের কাছে তা গোপন থাকে। ফস্কা গেরো হয়ে গিয়েছে নির্দেশের ওই শক্ত বাঁধুনি। সিবিআই-প্রধান রঞ্জিত সিনহা আজ দু’পাতার এক হলফনামায় শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছেন, তদন্ত রিপোর্টের খসড়া কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমারকে এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক যুগ্ম সচিবকে দেখানো হয়েছে। আইনমন্ত্রীর পরামর্শে খসড়া রিপোর্টে কোনও পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি সিবিআই-প্রধান।
কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বার্থে সিবিআইকে কাজে লাগানোর অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই তুলে আসছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থক হয়েও মুলায়মসিংহ যাদব ও অন্য অনেক দলের তরফেও নানা সময় এই অভিযোগ উঠেছে। সিবিআই-প্রধানের হলফনামা পেশের পর সেই একই অভিযোগ তুলে আইনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে সুর চড়াতে দেরি করেনি বিজেপি। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি বলেছেন, “সরকার যে সিবিআই রিপোর্টে প্রভাব খাটাচ্ছে তা স্পষ্ট।” আইনমন্ত্রী ইস্তফা না দিলে সংসদ অচল করে রাখারও হুমকি দিয়েছে বিজেপি। আইনমন্ত্রী অবশ্য মনমোহন সিংহ ও সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছেন, ইস্তফা দেবেন না।
বিতর্কের শুরু সিবিআই-প্রধান সম্প্রতি আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরই। তখনই সিবিআই সূত্রে জানানো হয়েছিল, আইনমন্ত্রী কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে তদন্তের খসড়া রিপোর্ট দেখতে চেয়েছেন। আইনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে তখন থেকেই একটু একটু করে সুর চড়াচ্ছিল বিজেপি। আজ আরও জোরালো ভাবে সেই দাবি উঠলেও কংগ্রেস নরম হতে নারাজ। কারণ, অশ্বিনীকে বলিতে চড়ালে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। লোকসভা ভোটের আগে রক্তের স্বাদ পেয়ে যাবে বিজেপি। তারা চাপ বাড়াবে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে। সঙ্কট বাড়বে সরকারের।
কারণ, এই ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকে আলাদা করে দেখানো সম্ভব নয়। খনি বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের। ইউপিএ জমানার একটা বড় সময় কয়লা মন্ত্রক ছিল প্রধানমন্ত্রীর অধীনে। এই পরিস্থিতিতে নরম হলে বিপদ বাড়বে বুঝেই কংগ্রেস নেতৃত্ব আজ তড়িঘড়ি বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছেন, ইস্তফার প্রশ্ন নেই। সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলবে, এমন হলফনামা দেওয়ার জন্য রঞ্জিত সিনহা আজ সরকারি আইনজীবী নন, ভরসা করেছিলেন বেসরকারি আইনজীবীর উপরে। তিনি যে এমন কিছু করবেন, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন আগেই। আজ তাঁর হলফনামা পেশের পরই অশ্বিনী কুমার, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ ও অর্থমন্ত্রী পি চিদদম্বরমকে নিয়ে সংসদ ভবনে বৈঠকে বসেন মনমোহন-সনিয়া। পরে কমল নাথ বলেন, “আলোচনার জন্য সিবিআই-কর্তাকে ডেকে অশ্বিনী কুমার অন্যায় করেননি।” কংগ্রেস তবু আশঙ্কায়, ৩০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট আইনমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করলে অশ্বিনীর ইস্তফার প্রশ্নে চাপে পড়বে সরকার। ইতিমধ্যেই চাপ বাড়াতে জেটলি আজ বলেছেন, “সিবিআইয়ের তদন্তে আর নিরপেক্ষতা নেই। সরকার প্রভাব খাটিয়ে খসড়া রিপোর্টে কী কী পরিবর্তন করেছে, সিবিআইকে তা প্রকাশ করতে হবে।” সিবিআই-কর্তা আজ শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছেন, তাঁরা আরও একটি হলফনামা পেশ করবেন। জেটলিদের অভিযোগ, সরকারের অঙ্গুলিহেলনে চলছে সিবিআই। আদালতের চোখে ধুলো দিতেই তারা বোঝানোর চেষ্টা করছে, সরকার খসড়া রিপোর্ট দেখায় তদন্তে বিশেষ কিছু ক্ষতি হয়নি। সে কারণেই মুখবন্ধ আরও একটি খাম জমা দেওয়ার কথা বলেছে তারা।
সরকার-বিরোধী দ্বৈরথে আজও বলি হয়েছে সংসদের অধিবেশন। আগামী দিনগুলিতেও সংসদ চালানো নিয়ে উদ্বেগে পড়েছে সরকার। কংগ্রেস বুঝতে পারছে, জমি বা খাদ্য নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ ঠেকাতে বিজেপি মরিয়া। তবু সংসদ যাতে চলে সে জন্য কমল নাথ আজ লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু বিশেষ কোনও আশ্বাস পাননি তাঁর কাছে।
|