|
|
|
|
সারদা-যোগে বিরোধীদের হইচই, ওড়ালেন মানিক
নিজস্ব সংবাদদাতা • আগরতলা ও কলকাতা |
সারদা-কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গে যেমন তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তির, ত্রিপুরায় তেমন পাল্টা বিতর্ক সিপিএমকে নিয়ে। প্রদেশ কংগ্রেস এবং তৃণমূল উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে সারদা-সহ ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী করছে বামফ্রন্ট সরকারকে। বিধানসভায় শুক্রবার সারদা-সহ বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির প্রেক্ষিতে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিরোধী কংগ্রেস। যদিও সরকার পক্ষ সেই দাবি নাকচ করে দিয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের হাত ধরেই ত্রিপুরায় সারদার কাজকর্ম শুরু হয় বছর তিন-চার আগে। তৃণমূল নেতা মানিক দেব বলেন, “সারদা-সহ যে সব ভুঁইফোঁড় সংস্থার বিরুদ্ধে আজ অভিযোগ উঠছে, তার প্রত্যেকটির সঙ্গেই রাজ্যের বহু সিপিএম নেতা জড়িত।” এই সব সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাঁরা বহু দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। কংগ্রেস বিধায়ক আশিস সাহার দাবি, “রাজ্যের মন্ত্রী বিজিতা নাথ একটি চিট ফান্ড সংস্থার অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে সেখানে টাকা রাখার জন্য সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী মানিকবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করে দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ মূলত দানা বেঁধেছে সারদা গোষ্ঠী পরিচালিত একটি বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রের অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি ঘিরে। যে প্রসঙ্গে মানিকবাবুর বক্তব্য, “বছর দুই-আড়াই আগে একটি নতুন সংবাদপত্রের উদ্বোধনে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। সে অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ মিশনের এক মহারাজও ছিলেন। ছিলেন আরও বহু ব্যক্তি। আলোচনা হয় সংবাদপত্র নিয়ে। চিট ফান্ড প্রসঙ্গে কোনও কথা হওয়ার সুযোগ ছিল না, হয়ওনি।” স্মৃতি হাতড়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলছেন, “সংবাদপত্রটি যাতে সাধারণ মানুষের কথা বলে এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে, সেই কথাই অনুষ্ঠানে বলেছিলাম আমি। এক জন সাংবাদিকের অনুরোধেই ওঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম।”
সাংবাদিকদের আমন্ত্রণে মন্ত্রীরা যে সুযোগ পেলে সাড়া দেন, এ কথা মনে করিয়ে দিয়েই মানিকবাবুর সংযোজন, “ওই পত্রিকা গোষ্ঠী চিট ফান্ডের কারবারি কি না, তখন আমি জানতামও না।” বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, আমন্ত্রণ পাওয়ার পরে প্রশাসনিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে তিনি জেনেছিলেন, ত্রিপুরায় তখন ওই গোষ্ঠীর অন্য কোনও ব্যবসা নেই। পরে তারা ত্রিপুরায় আর্থিক কারবার শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গে যারা ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা হিসেবে কাজ করছে, ত্রিপুরায় তাদেরই সংবাদ-ব্যবসার কথা তখন জানা থাকলে তিনি অন্য রকম ভাবতেন।
কিন্তু সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে অসম রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্ত চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গেও দাবি জোরালো হচ্ছে। ত্রিপুরা সরকারও কি সেই রকম কিছু ভাবছে? মানিকবাবুর জবাব, “আমাদের রাজ্যে এখনও তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। ওই গোষ্ঠীর কার্যকলাপ নিয়ে ওই দুই রাজ্যের মতো কেলেঙ্কারিও হয়নি। কিছু অভিযোগ কোথাও কোথাও আছে। অর্থনৈতিক জালিয়াতি মোকাবিলায় আমাদের রাজ্যে যে আইন চালু আছে, তাতেই সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্য কোনও তদন্তের কথা এখনও ভাবছি না।” তবে সারদার মতো সংস্থাগুলির অনুমোদন যে কেন্দ্রীয় সরকার দেয়, তা মনে করিয়ে দিয়েই অর্থনৈতিক জালিয়াতি রোধে কেন্দ্রীয় স্তরেই কঠোর আইনের হয়ে ফের সওয়াল করেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিকবাবু।
তৃণমূল নেতা মানিক দেবের অবশ্য অভিযোগ, আইন থাকলেও গত ২০-২১ বছরে ত্রিপুরা সরকার এক জনকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেনি। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের বেশ কয়েক জন জড়িত থাকায় রাজ্য সরকার কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতেও পারেনি। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, আগরতলায় কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আমানতকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতেই একটি সংস্থার এক কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
|
পুরনো খবর: শক্ত আইন তৈরি করেছে ত্রিপুরা, পারেনি বাংলা |
|
|
|
|
|