|
|
|
|
যুক্তি, আইনি ক্ষমতা নেই |
অন্য সংস্থাগুলি নিয়ে আপাতত চুপ রাজ্য সরকার
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পালে বাঘ পড়েছে। এখন তাই সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নড়াচড়া শুরু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থা সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া, বা সেবি আরও অন্তত চারটি ভুঁইফোঁড় সংস্থার বিরুদ্ধে আগেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। মহাকরণ তাই নিয়ে পাল্টা বল ঠেলেছে সেবি-র কোর্টেই। এই চারটি সংস্থা হল রোজভ্যালী, এমপিএস ও সানপ্ল্যান্ট গোষ্ঠী এবং সুমঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ। এই চারটি সংস্থা আমানতকারীদের কাছ থেকে অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকা তুলেছে।
ব্যাঙ্কের চেয়ে বহু বেশি গুণ হারে সুদ দেওয়ার টোপ দিয়ে টাকা জমানোর যে স্কিম চালায় বেসরকারি ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলি (চালু নাম, চিট ফান্ড), তাতে সারদার মতো একই ভাবে নাম উঠে এসেছে ওই চার সংস্থার। সেবি-র তদন্তে উঠে এসেছে এই তথ্য। এই ব্যবসা বন্ধ করার জন্য সেবি-র পক্ষ থেকে সংস্থাগুলির কাছে নোটিস পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, ওদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার জন্য রাজ্য সরকারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। সেবি যে মাস দুয়েক আগে সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছে, মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে সে কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সেবি-র চিঠির প্রেক্ষিতে কার্যত কোনও পদক্ষেপ করেনি রাজ্য। ব্যতিক্রম সারদা।
সেবি-র পরামর্শ ছিল, ওই সংস্থাগুলির কার্যকলাপ তদন্ত করে খতিয়ে দেখুক পুলিশ। পাশাপাশি, রাজ্যের অর্থ দফতরের ‘ইকনমিক অফেন্স উইং’-কে তদন্ত করতে বলা হোক। বৃহস্পতিবার মহাকরণে এই নিয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে অর্থ দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, টাকা তোলার সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের হাতে কোনও আইনি সংস্থান নেই। এই সংক্রান্ত আইন কেন্দ্রের। তারাই এদের অনুমতি দেয়। তবে যদি কেউ ভুঁইফোঁড় সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করে, অথবা সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়, একমাত্র সে ক্ষেত্রেই সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। যেমন হয়েছে সারদার ক্ষেত্রে। ওই কর্তার দাবি, স্টেট লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির (এসএলসিসি) বৈঠকে ওই ধরনের সংস্থাকে অনুমোদন দেওয়া নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সেবি-র প্রতিনিধিদের কাছে আপত্তির কথা জানানো হয়েছে। চারটি ভুঁইফোঁড় সংস্থার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের তদন্ত রিপোর্টও ওদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
সেবি-র দাবি, ওই পাঁচ সংস্থার বিরুদ্ধে তারা আগেও সতর্ক করেছে রাজ্যকে। সূত্রের খবর, নতুন
সরকারের আমলে গত দু’বছরে এসএলসিসি-র বৈঠকে সেবি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা ওই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যের অর্থ দফতরকে বলে। তাতেও কোনও কাজ হয়নি।
প্রশাসনের একটি অংশের বক্তব্য, সারদা গোষ্ঠী বিষয়টি সামনে চলে আসায় এখন কিছু পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। সারদার মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সারদার গরিব-মধ্যবিত্ত আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ৫০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নতুন আইন, অর্ডিন্যান্স করার কথাও ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সারদা বাদে বাকি সংস্থাগুলিকে কেন্দ্র করে যে হেতু কোনও ঘটনা ঘটেনি, তাই রাজ্যও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
রোজভ্যালী সংস্থার অবশ্য দাবি, সারদার সঙ্গে তাদের এক গোত্রে ফেলা ঠিক হবে না। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের দাবি, রোজভ্যালি অ্যাসেটভিত্তিক কোম্পানি এবং মানুষের দায়বদ্ধতা পূরণে সর্বতোভাবে আর্থিক সঙ্গতিপূর্ণ কোম্পানি। সংস্থার মালিক গৌতম কুণ্ডু এ দিন বলেন, “আমাদের দু’টি কোম্পানি নিয়েই সেবি নোটিস পাঠিয়েছে। এর মধ্যে জমি-বাড়ির ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন একমাত্র ‘হলিডে মেম্বারশিপ’ স্কিম চালু আছে।” তাঁর দাবি, “সেবি-র প্রতিটি নোটিসের আমরা উত্তর দিয়েছি। শুধু সেবি নয়, যে-ই তদন্ত করুক, আমরা তাদের স্বাগত
জানাচ্ছি। তাদের সঙ্গে সব রকম সাহায্য করব। আমরা সঠিক ভাবেই ব্যবসা করি।” বাকি সংস্থাগুলির কর্তাদেরও বক্তব্য, তাঁরা যাবতীয় নিয়ম মেনেই ব্যবসা করেন।
|
পুরনো খবর: অবশেষে ভুঁইফোঁড় অর্থ লগ্নি সংস্থা নিয়ে সক্রিয় রাজ্য |
|
|
|
|
|