হাজরা মোড়ে ফের বিক্ষোভ
জেলায় জেলায় ধরপাকড় ভুঁইফোঁড় সংস্থার কর্তাদের
সারদা-কেলেঙ্কারির পর রাজ্য জুড়েই অন্য ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থাগুলি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রোজভ্যালীর মতো কয়েকটি সংস্থার দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন আমানতকারীরা। মহানগরীর রাজপথেও সেই বিক্ষোভের আঁচ পড়ছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ হাজরা মোড়ে জড়ো হন শ’দুয়েক বিক্ষোভকারী। তাঁরা একটি ভুঁইফোঁড় সংস্থার এজেন্ট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির দিকে এগোতে গেলে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পুলিশকর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধ্বস্তিও হয় তাঁদের। পরে সকলকেই গ্রেফতার করা হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এজেন্টের মাধ্যমে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছে সংস্থা। সময়সীমা পেরনোর পরেও আমানতকারীরা টাকা পাননি। এজেন্টরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেছেন। এ দিন সকালে টালিগঞ্জ থানার সামনেও একটি সংস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, যে সংস্থাগুলো বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছে, তার মধ্যে অন্যতম ‘এটিএম গ্রুপ অফ কোম্পানিজ’। এটিএম গোষ্ঠীর কর্ণধার গড়বেতার বাসিন্দা তৈমুর আলি গায়েন সংস্থার প্রচারপত্রে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছাপিয়ে এবং তাঁর সঙ্গে সখ্যের কথা উল্লেখ করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। এ নিয়ে অভিযোগ পৌঁছেছে খোদ মহাকরণে। তৈমুরের সাফাই, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার ছবি অজান্তেই পুস্তিকায় ব্যবহার করেছিলেন সংস্থার এক কর্মী। তাঁকে বরখাস্ত করেছি। এখন আর মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করছি না। এক বার
কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওঁর ছবি ভুল ভাবে ব্যবহারের জন্য ক্ষমাও চেয়েছি।”
পুলিশ-প্রশাসন অবশ্য তৈমুরের সংস্থার উপর নজরদারি চালাচ্ছে। সংস্থা সম্পর্কে মেদিনীপুর (সদর)-এর মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী। তাতে বলা হয়েছে, ওই সংস্থা আমানতকারীদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পূরণ করতে পারবে কি না, সংশয় রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মেদিনীপুরে চার বছর ধরে কাজ করছে সংস্থাটি। মানি মার্কেটিং, এগ্রিকালচার, রিয়েল এস্টেট-সহ নানা কারবার রয়েছে এদের। মহকুমাশাসক রিপোর্টটি ডিইবি (ডিস্ট্রিক্ট এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ)-এর পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর বক্তব্য, “পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে।” জানা গিয়েছে, রাজ্য জুড়ে একশোটিরও বেশি শাখা রয়েছে এই সংস্থার। মেদিনীপুর শহর, চন্দ্রকোনা রোড-সহ বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে অফিস। প্রধান কার্যালয় বালিতে।
হতাশাই সম্বল। বিক্ষোভে সামিল একটি ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার
এই এজেন্টও। বৃহস্পতিবার হাজরায়। ছবি: প্রদীপ আদক।
সারদা-র মতোই ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা অ্যানেক্স-এর কর্তা প্রসেনজিৎ মজুমদার ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। শুক্রবার ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। শিলিগুড়ির বাসিন্দা প্রসেনজিৎবাবুকে বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ জানান, অ্যানেক্স-এর আরও দুই কর্তা নির্মলকুমার ঝা ও অসীম দাসের খোঁজ চলছে। তিনি বলেন, “চিটফান্ড চালালেও ব্যবসার ধরন ছিল অন্য রকম। আমানতকারী নয়, এখানে সবাই ছিলেন সদস্য।” সংস্থাটির রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ছাড়পত্রও ছিল না।
আর এক ভুঁইফোড় সংস্থা এইচ বি পি ফাইন্যান্স ও ট্রেডিংয়ের মালিক তপন সাহাকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, গত ৩১ বছর ধরে তপনবাবু ওই সংস্থা চালাচ্ছেন। ৭৯ এ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রোডে সংস্থার অফিস। কয়েকজন আমানতকারী গত ৩ এপ্রিল টালিগঞ্জ থানায় সংস্থার মালিক ও এক এজেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই এই গ্রেফতার। পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা তছরুপ করেছে ওই সংস্থা।
এক এজেন্টের অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ থেকেও একটি ভুঁইফোড় সংস্থার ম্যানেজার অনিমেষ ঘটককে গ্রেফতার করে পুলিশ। কাকদ্বীপ বাজারে রথতলা মোড়ের কাছে সংস্থার অফিসটি দিন পনেরো আগে বন্ধ হয়ে যায়। সংস্থার মালিকের খোঁজ করছে পুলিশ। ধুপগুড়িতে ‘সমাজ কল্যাণ সমিতি’ নামে এক সংস্থার চেয়ারম্যান মিঠু রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। চার বছর আগে বন্ধ হয়েছে সংস্থাটি। বহরমপুরে ‘ক্রিপটন গ্রুপ অফ কোম্পানিজ’-এর কর্তা প্রাণকুমার বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী শম্পা-সহ চার জনকে এ দিনই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশি ধরপাকড়ের পাশাপাশি জেলায় জেলায় চলছে বিক্ষোভ। লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগে এ দিন ক্যানিংয়ে ‘সানমার্গ’-এর অফিসে ভাঙচুর চালান এজেন্টরা। আধ ঘণ্টা ক্যানিং-বারুইপুর রোড অবরোধ করা হয়। ময়নাগুড়িতে টাকা চাইতে আসা ‘সানমার্গ’-এর এক আমানতকারীকে কয়েকজন এজেন্টরা মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একজনকে আটক করেছে পুলিশ। মেচেদা বাজারে রোজভ্যালীর শাখা অফিসেও এ দিন হামলা চালান একদল গ্রাহক। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ কুমার জৈন বলেন, “বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার অফিসে হামলার অভিযোগ এসেছে। সংস্থাগুলি নিরাপত্তা চাননি। তবে পুলিশ টহলদারি বাড়ানো হয়েছে।” এ দিন বিক্ষোভ হয়েছে কৃষ্ণনগর, বহরমপুর, ডায়মন্ড হারবারে বিভিন্ন সংস্থার অফিসেও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.