শিয়রে ভোট। তাই দুর্নীতির রিপোর্ট নিয়েও রাজনীতির খেলায় নেমেছে সমস্ত দল। টুজি দুর্নীতির তদন্তে গড়া যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) চেয়ারম্যান পি সি চাকোকে সরানোর জন্য বিরোধীরা যখন এককাট্টা, কংগ্রেসও বিজেপির তিন সদস্যকে সরাতে স্পিকারের দ্বারস্থ হল।
বিরোধীদের আক্রমণের আঁচ পেয়ে জেপিসির চূড়ান্ত বৈঠকটিই আজ স্থগিত করে দিল কংগ্রেস। তবে কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে তৃণমূল সাংসদ অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুকে। কিন্তু এর পরেও বিরোধীদের আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি জেপিসি-র চেয়ারম্যান পি সি চাকো। জেপিসি রিপোর্টের বিরুদ্ধে বিরোধীরা একজোট হয়ে স্পিকার মীরা কুমারের কাছে গিয়ে চাকোর অপসারণের দাবি তোলে। সেখানে বাম-বিজেপি-তৃণমূল-ডিএমকে-এডিএমকের মতো কেন্দ্রে ও রাজ্যে পরম প্রতিপক্ষরাও একই স্মারকলিপি নিয়ে পৃথক ভাবে দ্বারস্থ
হন স্পিকারের।
আবার বিরোধী জোটকে ছত্রভঙ্গ করতে কংগ্রেসও স্পিকারের কাছে পাল্টা চিঠি লিখেছে। তাতে পাল্টা দাবি করা হয়েছে, স্বচ্ছতার খাতিরে যশোবন্ত সিংহ, যশবন্ত সিন্হা, রবিশঙ্কর প্রসাদকেও সরানো হোক জেপিসি থেকে। কারণ, এনডিএ আমলে মন্ত্রী থাকার সময় টেলিকম নীতি রূপায়ণের সঙ্গে এঁরা প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন। কংগ্রেসের বক্তব্য, জেপিসি রিপোর্টে টুজি কেলেঙ্কারিতে তাঁদের ভূমিকা সামনে চলে আসার আশঙ্কাতেই এখন ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। সে কারণে চাকোর অপসারণের দাবি তুলে বিরোধীরা গোটা বিষয়টির অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন। কংগ্রেসের এই পাল্টা জবাব নিয়ে অবশ্য যশবন্ত সিন্হা বলেন, “বিষয়টি দু’বছর আগেই উঠেছিল । কিন্তু তখনই সেটির নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছিল।”
ভোট-বছরে টুজি কাণ্ড নিয়ে বিরোধীরা যে আক্রমণের সুযোগ ছেড়ে দেবে না, তা জানেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এর মধ্যে প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়েছেন। ইউপিএ-র সমর্থক সমাজবাদী পার্টি আজ চাকোর অপসারণের দাবিতে বিরোধীদের সঙ্গে হাত না মেলালেও জানিয়েছে, তারাও চায় রাজাকে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হোক।
চাকোকে সরানোর দাবি তুললেও স্পিকার যে তা মেনে নেবেন, এমন আশা বিরোধীরা করেন না। তবু রিপোর্টে যে ভাবে মনমোহন সিংহ ও পি চিদম্বরমকে আড়াল করা হয়েছে, সেটি তারা মানতে পারছেন না। সে কারণেই আজ বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি, বা গুরুদাস দাশগুপ্ত থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বা ডিএমকের শিবার সঙ্গে এডিএমকের থাম্বিদুরাইয়ের যতই রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকুক, তাঁরা একজোট হয়েছেন। আগামী সপ্তাহে ফের বৈঠক ডাকার কথা চলছে। সে দিনও হট্টগোলের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। সংখ্যা বা গায়ের জোরে কংগ্রেস রিপোর্টটি পাশ করিয়ে নিলেও ভোট ময়দানে তা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার করবে বিরোধীরা।
আবার কংগ্রেসও এই রিপোর্টটিকেই হাতিয়ার করে আত্মরক্ষার কৌশল নিচ্ছে।
|