|
|
|
|
হাজির গোটা দেশের পর্যটন পসরাও |
|
অভিযোগ শোনার সাহস নিয়ে ফেসবুকে রেল
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
নেট-দুনিয়ায় তাদের পরিষেবা মেলে। পাওয়া যায় হাজারো তথ্যও। কিন্তু সে বড় একতরফা ব্যাপার। তারা যা জানায় সেটুকুই জানতে পারেন মানুষ। কিন্তু কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীকে একসূত্রে গেঁথে রাখা রেলই এ বার নেটসমাজে বন্ধু খুঁজতে শুরু করেছে। ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পাতা খুলে ফেলেছে রেলের প্রতিটি জোন। প্রচুর মানুষ ‘লাইক’ করতে শুরু করেছেন ইতিমধ্যেই। রেলের নামে ফেসবুকে অনেক পাতা চালু রয়েছে আগে থেকেই। সে সব ব্যক্তিগত আগ্রহে তৈরি পাতা। জোনওয়াড়ি এই সব ফেসবুক পাতায় রেল আধিকারিকরা উত্তরও দিচ্ছেন নতুন পাওয়া বন্ধুদের নানা প্রশ্নের।
রেলকর্তাদের একটা অংশ অবশ্য আশঙ্কায়, অভিযোগের পাহাড় নেমে আসবে না তো! এখন তো মোবাইল থেকে ট্যাবলেট, সবেতেই হাজির নেটসংযোগ। এবং সেই সূত্রে ফেসবুকও। এমনিতেই রেলের পরিষেবা নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। তাই ফেসবুকও কার্যত সহজে অভিযোগ জানানোর জায়গা হয়ে উঠতে পারে। দেশের এক প্রান্তে কেউ রেলের পরিষেবা নিয়ে কোনও অভিযোগ তুললেই উঠতে পারে প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড়। এক জন যাত্রীর অভিযোগ উষ্মার আকার নিয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে হাজার- হাজার যাত্রীর মধ্যে।
রেল মন্ত্রক কিন্তু এই আশঙ্কায় দমে যেতে নারাজ। এই ক্ষেত্রে মন্ত্রকের বক্তব্য, কেউ যদি পরিষেবায় কোনও ত্রুটি বা গাফিলতির কথা তুলে ধরেন, সেটা এড়িয়ে না গিয়ে যথাসম্ভব তার মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করা হবে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই যাত্রীদের অনেক পরামর্শ সমস্যা সমাধানে রেলকে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া ক্ষোভ প্রকাশের একটা জানলা খোলা থাকলে সেটাও রেলের উপর প্রত্যাশার চাপ সামলাতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন রেলকর্তারা।
ভাবনাটা জুগিয়েছিলেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তল। রেল সূত্রে খবর, এ বছরের গোড়াতেই তিনি সব আঞ্চলিক রেলের জেনারেল ম্যানেজারদের চিঠি লিখে ফেসবুকে হাজির হওয়ার অনুরোধ করেন। চলতি মাসে আবার চিঠি দেন তিনি। এর পরেই তোড়জোড় শুরু করে রেলের আঞ্চলিক দফতরগুলি। তারই সূত্রে ফেসবুকে এখন রেলের সব অঞ্চলই হাজির। রেলকর্তারা মানছেন, ফেসবুক এখন এতই জনপ্রিয় যে জনসংযোগ বাড়ানোর কাজে একে উপেক্ষা করার উপায় নেই। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ গড়ে তুলতে এখন ফেসবুক-এর বিকল্প নেই।
রেল তার ওয়েবসাইটগুলির মাধ্যমে নানা তথ্য ও পরিষেবা জুগিয়ে থাকে। কিন্তু সেখানে যাত্রীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ কম। সম্প্রতি রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী শিয়ালদহে ‘আম-দরবার’ চালু করেছেন। সেখানেও যাত্রীরা আসেন মূলত অভাব-অভিযোগের কথা জানাতে। ফেসবুক তার অতিরিক্ত কিছু দেবে বলে মনে করেন রেল প্রতিমন্ত্রীও। অধীরবাবুর কথায়, “এতে রেলের লাভই হবে। অনেকে অনেক তথ্য পাবেন, দেবেনও। এই ধরনের জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়াকির্ং সাইটে রেল থাকবে না-ই বা কেন!”
প্রচারের পাশাপাশি ফেসবুক পাতাগুলিতে থাকছে, নতুন ট্রেনের সময়সূচি, ট্রেনের সময় পরিবর্তন, স্পেশ্যাল ট্রেনের খবরাখবর ইত্যাদি। ভ্রমণার্থী টানতে তুলে ধরা হচ্ছে গোটা দেশের পর্যটন-পসরাও। দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের ছবি। যেমন, উত্তর-পূর্ব রেলের পাতায় দেখা যাচ্ছে অসমের কামাখ্যা স্টেশনের ছবি। মেট্রো রেলের পাতায় রয়েছে রাতের কলকাতা, আর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পাতায় রয়েছে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের প্রাসাদের ছবি (এটিই এখন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর দফতর)। এ সবের বাইরে ট্রেনে আসন সংরক্ষণের হালহকিকতও সেখানে দেওয়া যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে ফেসবুকে রেলের নাম করে অনেক পাতা রয়েছে। প্রতিটি জোনের ক্ষেত্রেও খুঁজলে অনেকগুলি করে পাতা পাওয়া যাবে। কোনটি আসল? কোনও আলাদা করে চিহ্ন না থাকলেও যে সব পাতায় রেলের আধিকারিকরা লিখে উত্তর দিচ্ছেন এবং রেলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খবর দেওয়া হচ্ছে সেগুলিই হল রেলের নিজস্ব পাতা।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “ফেসবুকের মাধ্যমে রেল অনেকটাই যাত্রীদের কাছে আসতে পারবে।” একই কথা বলেছেন, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সিতু সিং হাজংও। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জোনের পাতাগুলিতে পোস্ট করা বিভিন্ন ছবি ‘লাইক’ করতে শুরু করেছেন রেলের ফেসবুক-বন্ধুরা। আসছে নানা প্রশ্ন। উত্তরও দিচ্ছেন রেলকর্তারা। |
|
|
|
|
|