দেবযানীর কাছে হাত পাততেন ছোট প্রোমোটাররা |
বছর তিনেক ধরে ঢাকুরিয়া ও যাদবপুর এলাকার বহু ছোট প্রোমোটারের কাছে রীতিমতো ‘মা অন্নপূর্ণা’ হয়ে উঠেছিলেন সারদা গোষ্ঠীর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপ্যাধায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ঢাকুরিয়া ও যাদবপুর এলাকায় কার্যত কোনও খালি জমি পড়ে নেই। নিরুপায় প্রোমোটারেরা তাই পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন আবাসন গড়ে তোলার ব্যবসা শুরু করেছেন। পুরনো বাড়ি কিনতে এবং ভাঙতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন। ছোট মাপের প্রোমোটারদের কাছে এত টাকা কোথায়? এলাকার ঠিকাদারদের কথায়, এখানেই মুশকিল আসান হয়ে দেখা দিতেন সারদার ‘নম্বর টু’ দেবযানী। পুরনো বাড়ি কেনার জন্য নগদ টাকার দরকার হলেই দেবযানীর দ্বারস্থ হতেন প্রোমোটারেরা। তিনি ফিরিয়ে দিতেন না।
|
কাশ্মীরের কোর্টে
দেবযানী। —ফাইল চিত্র |
সম্প্রতি ঢাকুরিয়া স্টেশন রোড ও সেলিমপুর এলাকায় দু’টি বড় বাড়ি কিনেছেন এক প্রোমোটার। দু’টির ক্ষেত্রেই বাড়ি কেনার টাকা দেবযানীদেবী জুগিয়েছেন বলে এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়। এর মধ্যে একটি বাড়ি ভেঙে ফেলে ফ্ল্যাট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আর একটি বাড়ি এখনও ভাঙা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, “স্থানীয় কয়েক জন আইনজীবী মারফত ছোট মাপের প্রোমোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন দেবযানী ম্যাডাম।” দেবযানীর আশীর্বাদধন্য ঢাকুরিয়া স্টেশন চত্বর এলাকার এক প্রোমোটারের কথায়, “টাকার বিনিময়ে উনি বেনামে ফ্ল্যাট নেওয়ার প্রস্তাব দিতেন। ওই প্রস্তাবও আসত আইনজীবীদের মাধ্যমেই। কয়েকটি আবাসনে তিনি ফ্ল্যাটও নিয়েছেন। পরে আবার তা ভাড়াও দেওয়া হয়েছে।” প্রোমোটাররা জানান, ম্যাডাম সরাসরি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। আইনজীবীদের মাধ্যমেই প্রোমোটারদের কাছে নগদ টাকা পাঠিয়ে দিতেন। তাঁর সুপারিশে কয়েক জন আইনজীবীর নামেও ফ্ল্যাট নেওয়া হয়েছে। ফ্ল্যাটগুলির অধিকাংশ ফাঁকাই রয়েছে। কয়েকটি অবশ্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
শুধু ছোট মাপের প্রোমোটার নন। এলাকার নানা ক্লাবও দুর্গাপুজো থেকে নানা অনুষ্ঠানে দেবযানীর আর্থিক-অনুদান পেয়েছে। বাবুবাগান লেনের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “বছর তিনেক ধরে এলাকার গৌরী সেন হয়ে উঠেছিলেন দেবযানী। তবে প্রকাশ্যে কোনও অনুষ্ঠানে আসতেন না। অফিসের কাজের চাপ আছে বলে এড়িয়ে যেতেন।”
গরিবদের কম্বল, জামা-কাপড় বিলি করবেন বলে মাঝে-মধ্যেই দেবযানীর ফ্ল্যাটে হাজির হতেন স্থানীয় ক্লাবের কর্তারা। ‘ম্যাডাম’ কাউকে ফেরাতেন না। ক্লাবের ছেলেরা যে টাকা দাবি করতেন, তার এক কণাও কম পেতেন না।
ঢাকুরিয়া চত্বরের এক ক্লাবকর্তা বলেন, “যা চেয়েছি, দরাজ হাতে দিয়েছেন। বলতেন, আমি তো এই পাড়ার মেয়ে। বড় চাকরি করি। টাকা দিতে কোনও অসুবিধা নেই।”
|