বিপদ টের পেয়েই সারদা ছাড়েন প্রাক্তন পুলিশকর্তা |
নিরাপত্তা পরামর্শদাতার পদে তাঁকে নিয়োগ করেছিলেন সারদা গোষ্ঠীর প্রধান সুদীপ্ত সেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই রাজ্য পুলিশের পোড়খাওয়া অফিসার রজত মজুমদার বুঝে গিয়েছিলেন যে, ওই সংস্থায় থাকলে তাঁর সামাজিক নিরাপত্তা ব্যাহত হতে পারে। ১১ মাস কাজ করে শেষ পর্যন্ত গত বছর এপ্রিলে নিজের সম্মান বাঁচাতে সারদা সিটির নিরাপত্তা পরামর্শদাতার পদ থেকে ইস্তফা দেন রজতবাবু।
|
রজত মজুমদার |
সারদা সংস্থার নানা অনিয়ম প্রকাশ্যে আসার পরে তাঁর সেই সিদ্ধান্ত যে কতটা সঠিক ছিল, তা বুঝতে পারছেন রজতবাবু। তিনি বলেন, “কিছু দিনের মধ্যেই সংস্থার কাজকর্ম নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছিল। প্রথমে দেখি, আমার সাম্মানিক দেওয়া হচ্ছে নগদ টাকায়। চাপ দিয়ে তা চেকে করালাম। তার পরে দেখলাম আমার বেতন থেকে নিয়মিত আয়কর, পরিষেবা কর কাটা হচ্ছে না। বার বার বলেও তা ওদের দিয়ে করানো যায়নি। এর পর থেকে আমি নিজে প্রতি তিন মাস অন্তর সংশ্লিষ্ট দফতরকে প্রাপ্য মিটিয়ে দিয়েছি।”
রজতবাবুর অভিযোগ, “প্রথম কয়েক মাস ওদের কাজের ধরনটা বুঝতে পারিনি। দেখলাম অনেক কর্মীকেই স্বচ্ছতার সঙ্গে, নিয়ম মেনে টাকা দেওয়া হচ্ছে না। তখনই সুদীপ্তবাবু এবং সংস্থার মুখ্য হিসাবরক্ষক (সিএফও) অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সতর্ক করেছিলাম। বলেছিলাম, সংস্থা এই ভাবে চললে বিপদে পড়বে। তাতেও কাজ না হওয়ায় আমার চাকরি না ছেড়ে উপায় ছিল না।” ডিজি পদমর্যাদার পদ থেকে অবসর নেওয়া রজতবাবু কী ভাবে সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হলেন? পদ্মপুকুরের বাড়িতে বসে প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বঙ্গ সম্মেলন অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা। ২০১১ সালের মে মাসে ওই অনুষ্ঠানের জন্য স্পনসরের খোঁজ করছিলেন তাঁরা। পরিচিত এক জনের মারফত তিনি যান সুদীপ্ত সেনের কাছে। লাস ভেগাসের ওই অনুষ্ঠানের জন্য দু’কোটি টাকা দিতে সম্মত হন সারদা-কর্তা। আলোচনায় রজতবাবুর সঙ্গে ছিলেন কমিটির আর এক সদস্য, কলকাতা দূরদর্শনের এক প্রাক্তন আধিকারিক। সেই সময়েই সুদীপ্তবাবু জোকায় প্রস্তাবিত ‘সারদা সিটি’-এর নিরাপত্তা-পরামর্শদাতা হিসেবে তাঁকে নিয়োগ করেন বলে জানিয়েছেন রজতবাবু।
শুধু কর সংক্রান্ত অনিয়ম নয়, সারদা সিটি-র বেশ কিছু কাজকর্মও যে নিয়ম মেনে হচ্ছে না, তা-ও বুঝতে পারেন রজতবাবু। তিনি বলেন, “মিউটেশন ছাড়াই জমি বিক্রি হচ্ছিল।” নিরাপত্তা পরামর্শদাতা হিসেবে এই সব কাজকর্ম বন্ধে তিনি কেন উদ্যোগী হলেন না? রজতবাবুর দাবি, আবাসন প্রকল্পের মান যাতে ভাল হয় তাঁর জন্য তিনি দেশের এক নামী ও অভিজ্ঞ স্থপতিকে সংস্থার পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়ে এসেছিলেন। আইনি পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়ে এসেছিলেন একটি নামী সলিসিটার ফার্মের অংশীদারকে। প্রাক্তন এই পুলিস কর্তার আক্ষেপ, “কোনও পরামর্শদাতার সুপারিশই কাজে লাগানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না সারদা-কর্তার!” এ সবের মধ্যেই সারদা সংস্থাকে সতর্ক করে চিঠি পাঠায় সেবি। রজতবাবুর দাবি, সেবি-র চিঠি আসার পর থেকেই তিনি ওই সংস্থা থেকে নিজেকে আলাদা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর কথায়, “বার বার সতর্ক করেছিলাম। তাতে কাজ না হওয়ায় ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে আমি ইস্তফা দিই। কিন্তু সুদীপ্তবাবু ছাড়তে চাননি। আরও টাকা, ভাল মোবাইল ফোন, গাড়ি দিয়ে আমাকে উনি নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি আর ওই সংস্থায় থাকতে রাজি হইনি।”
একজন পুলিশ-কর্তা হয়েও সারদার এত অনিয়মের কথা তিনি কেন পুলিশের নজরে আনলেন না? রজতবাবুর মন্তব্য, “ওটা আমার কাজ নয়। আমার যা করার, তা করেছিলাম। তাতে কাজ না হওয়ায় সরে এসেছি। বেঁচে গিয়েছি!”
|