মদ্যপান করতেন না। আমিষ খেতেন না। বলতেন, “যারা দুশ্চরিত্র, ঠগ তারা ও সব করে।”
সারদা গোষ্ঠীর মহিলা ব্রিগেডের কাছে ‘স্যার’-এর ছবিটা ছিল এ রকমই। ‘সুদীপ্ত স্যার’ তাঁদের বলেছিলেন, তিনি রামকৃষ্ণ মিশনে দীক্ষিত। প্রচারের আলোয় আসতে চান না, নিঃশব্দে কাজ করতে চান।
‘মানুষের জন্য’ কাজ করতে গিয়েই সুদীপ্ত গড়ে তুলেছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত মহিলা-বলয়। এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায় একা নন। সুদীপ্তর চেম্বার ঘিরে থাকতেন প্রায় ৪০ জন মহিলা। এনারাই অফিসের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজ করতেন। এঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে ছিলেন তিন জন মণিরত্না রায়, পৌলমী ঘোষ এবং রেশমী লাহিড়ী। তার পরেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল আরও ৬টি নাম। তাঁরা হলেন, অনুত্তমা বসু, পায়েল দত্ত, ববিতা দাস, রাজশ্রী ভট্টাচার্য, চন্দ্রাণী রায় ও মৌমিতা দাস। প্রত্যেকেই সংস্থার বিভিন্ন পদে আসীন। প্রায় ৩০ জন মিলে সামলাতেন অ্যাকাউন্টস।
মহিলা ব্রিগেডের সদস্যরাই জানাচ্ছেন, স্যারের কাজ পছন্দ হলে দ্রুত উন্নতি হত। কী রকম? জনসংযোগ ও সাংবাদিকতায় এমএ করে মণিরত্না ম্যাগাজিনে প্রুফ রিডিংয়ের কাজ করতেন। মাস কয়েকের মধ্যেই বছর পঁচিশের মণিরত্না এগজিকিউটিভ পদে আসীন হন। তেমনই রেশমী লাহিড়ী রিসেপশনিস্টের পদ থেকে কয়েক মাসের মধ্যেই ট্রান্সপোর্ট বিভাগের কর্ণধার হয়ে ওড়িশার ব্যবসার দায়িত্ব নেন। রেশমীর কথায়, “পারদর্শিতা দেখিয়েই ওই পদে উঠেছিলাম।”
একমত মণিরত্নাও। বিশ্বভারতীতে পড়াশোনার সুবাদে শান্তিনিকেতনে যাতায়াত ছিল তাঁর। তাই কোপাই রিসর্টের সৌন্দর্যায়নের ভার দেওয়া হয় মণিরত্নাকে। “এমডি স্যারের কিছু পছন্দ হলেই কিনে ফেলতে চাইতেন। শান্তিনিকেতনে থাকতে গিয়ে হুট করেই পছন্দ হয়ে যায় কোপাই রিসর্ট। চার কোটি টাকায় সঙ্গে সঙ্গে রিসর্টটি কিনে ফেলেন।” সেই রিসর্ট সাজানোর কাজ পছন্দ হওয়াতেই ‘এমডি স্যারে’র পছন্দের তালিকায় চলে যান মণিরত্না। সংস্থার মূল অফিসে সুদীপ্তর চেম্বারের পাশে বসার জায়গা পান তিনি। একই কেবিনে বসতেন সুদীপ্ত ও দেবযানীও।
মণিরত্নার নতুন ডিউটি হয়, রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত। এই সময়কেই ‘পিক আওয়ার্স’ বলা হত। রাতেই শাসক দলের সাংসদরা অফিসে আসতেন বলেও জানিয়েছেন মহিলা ব্রিগেডের সদস্যরা। মণিরত্না জানান, কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক থাকলে সে দিন অফিস ছুটি দিয়ে দেওয়া হত।
যে কাশ্মীর থেকে ধরা পড়লেন সুদীপ্ত, সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে এক বছর আগেও সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। যথারীতি সঙ্গে ছিলেন দেবযানী, মণিরত্না ও পৌলমী। লালচকের বিলাসবহুল হোটেল ‘দ্য ললিত’-এ ওঠেন তাঁরা। জম্মু-কাশ্মীরেও এজেন্ট নিয়োগ করে লগ্নি ও ব্যবসার পরিধি বাড়াতে চাইছিলেন সুদীপ্ত। সংবাদপত্র প্রকাশনার ইচ্ছে ছিল। “না, অসম্ভব এমন শব্দ স্যার পছন্দ করতেন না,” বলছিলেন মণিরত্না।
এখন বেশ আফশোসই হচ্ছে। মণিরত্না বলেন, “তখন বুঝতে পারলে কী আর...?” আর পৌলমীর কথায়, “আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে। এ সব জানলে অন্য কোথাও কিছু না কিছু কাজ ঠিক জুটিয়ে নিতাম।”
|
(মহিলা ব্রিগেডের একাধিক সদস্যের ছবি হাতে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে তা ছাপা হল না।) |