কুলটির মিঠানি হাইস্কুল
শিক্ষকদের বিবাদে পাঠ লাটে
বিরোধ বেধেছে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের একাংশের। আর তার জেরে লাটে উঠতে বসেছে পঠনপাঠন। সরকারি অনুদানে চলা ৬৩ বছরের পুরোনো কুলটির মিঠানি উচ্চ বিদ্যালয় নিয়ে এমনই আশঙ্কা পড়ুয়া থেকে, অভিভাবক, শিক্ষক থেকে গ্রামবাসী সকলের। বিরোধের শেষ চেয়ে দু’পক্ষের কাছে আবেদনও করেছেন তাঁরা। সমস্যা মেটাতে দু’পক্ষের লিখিত অভিযোগ ও মতামত চেয়েছেন আসানসোলের সহকারী জেলা স্কুল পরিদর্শক। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে থেকেই এই বিরোধের সূত্রপাত। বিরোধ শুরু হয়েছিল কি নিয়ে তা নিয়ে ভিন্ন মত দু’পক্ষের। তবে স্কুলে গেলেই মালুম পড়ে এদের মিল একটা জায়গায়, তা হল কোনও পক্ষই বিরোধ মেটাতে আগ্রহী নয়। প্রতিদিনই কোনও না কোনও অছিলায় ঝামেলা বাধে। এর আগে মাঝ রাত পর্যন্ত প্রধান শিক্ষককে স্কুলে আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষকদের একাংশ। বচসা, হাতাহাতি, গালিগালাজ তো চলতেই থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসতে হয় পুলিশকেও। ১৮ এপ্রিলও স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বচসা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন পাল। গালিগালাজও চলে বলে অভিযোগ। আসে পুলিশও। আবার ২৪ এপ্রিল স্কুলের দেওয়ালে একাধিক জায়গায় প্রধান শিক্ষকের নামে কেউ বা কারা নানা কটু মন্তব্য লিখে রাখে। তা দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রধান শিক্ষক। পড়ুয়ারাও মন্তব্যগুলি পড়ে হাসাহাসি জুড়ে দেয়। এ বারও আসতে হয় পুলিশকে।
প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন পালের অভিযোগ, “আমার সব কাজেরই বিরোধীতা করছেন শিক্ষকদের একাংশ। কিছু বললেই দুর্ব্যবহার করেন। মারতে আসেন। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” কিন্তু কেন বিরোধীতা করছেন শিক্ষকেরা? বৃন্দাবনবাবুর জবাব, ওই শিক্ষকেরা এত দিন নিজের ইচ্ছামতো স্কুল করেছেন। কোনও নিয়ম নীতি মানেননি। ফলে শিক্ষার পরিবেশ ও শৃঙ্খলা তলানিতে ঠেকেছিল। তিনি আসার পর এ সব বন্ধ করতে চেয়েছেন। আর তাতেই স্বার্থে ঘা লাগায় বিরোধীতা শুরু করেছে শিক্ষকদের একাংশ। বাধা পাচ্ছে স্কুলের সামগ্রিক উন্নয়নও। তবে অন্যান্য শিক্ষকেরা অবশ্য এর উল্টো কথাই বলছেন। বিরোধী শিক্ষকদের পক্ষে এবিটিএ-র নেতা কিংশুক মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক আমাদের কোনও কথাই শোনেন না। বিনা কারণে শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। স্কুলের উন্নয়নে তাঁর কোনও পদক্ষেপ নেই।” কিংশুকবাবুর দাবি, এই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রধান শিক্ষক দায়ী।
স্কুলের পরিস্থিতিতে আবার রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁরা জানান, বৃন্দাবনবাবু এখানে আসার পরে তুচ্ছ কারণে তাঁর বিরোধীতা করেছিল এবিটিএ। এখন রাজ্যে সিপিএম ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় এই স্কুলেও এবিটিএ-র ক্ষমতা কমেছে। এই অবস্থায় প্রকাশ্যে না এসে পিছন থেকে এবিটিএ-র নেতারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ছেন বলে গ্রামবাসীদের একাংশের ধারণা। এমন আশঙ্কা বৃন্দাবনবাবুরও। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের পিছনে এবিটিএ সংগঠনের কেউ জড়িয়ে আছেন।” তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন এবিটিএ-র বর্ধমান জেলা সভাপতি অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এসব বাজে কথা। প্রধান শিক্ষক নিরপেক্ষ তদন্ত করুন। কোনও শিক্ষক এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন না।”
তবে এই তরজা মিটে কবে পড়ুয়াদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশে মিলবে তা নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকেরা। তাঁদের দাবি, এখন বিরোধের কারণ না খুঁজে দু’পক্ষের বিরোধ মিটিয়ে দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনাটাই কাম্য। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র তথা গ্রামের প্রবীন বাসিন্দা রাজেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে প্রধান শিক্ষককে আরও নমনীয় হয়ে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে বসে মীমাংসা করতে হবে।” ওই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক তথা গ্রামবাসী সোমনাথ চট্টরাজও বলেন, “স্কুলে যা ঘটছে তা আমাদের লজ্জা। কোন পক্ষ দোষী তা না ভেবে বিরোধের মেটানো হোক।” স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র তথা আইনজীবী দেবকুমার মুখোপাধ্যায়ও প্রয়োজনে গ্রামের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিরোধ মেটানোর কথা বলেছেন।
আসানসোলের সহকারী জেলা স্কুল পরিদর্শক অজিত হাজরা জানিয়েছেন, ১৯ এপ্রিল তিনি স্কুলে গিয়ে দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। দু’পক্ষকেই লিখিতভাবে তাঁদের অভিযোগ ও মতামতগুলি জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন। অজিতবাবু বলেন, “দু’পক্ষের লিখিত মতামত হাতে এলে আমি তাঁদের নিয়ে বসে বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নেব।”
এখন বিরোধ মিটিয়ে কবে স্কুল ফিরবে স্কুলেই, সেই আশায় রয়েছেন পড়ুয়া থেকে গ্রামবাসী সকলেই।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.