স্কুল চত্বরেই শিক্ষক শিক্ষিকা ও পড়ুয়াদের সামনে বচসা ও হাতাহাতিতে জড়ালেন দুই শিক্ষক। কুলটির মিঠানি উচ্চবিদ্যালয়ে বুধবার বিকেলের ঘটনা। নিয়ামতপুর পুলিশ ফাঁড়িতে দু’জনেই অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার তদন্তের কথা দিয়েছেন জেলা অতিরিক্ত স্কুল পরিদর্শক। এই ঘটনার নিন্দা করেছেন শিক্ষক, শিক্ষিকা, পড়ুয়াদের অভিভাবক ও শিক্ষক সংগঠনের নেতারা।
কুলটির মিঠানি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন পালের অভিযোগ, পদার্থবিদ্যার শিক্ষক মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি দিন দু’একজন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়ে পদার্থ্যবিদ্যার একটি পরীক্ষাগারে আড্ডা জমান, যা নিয়ম-বহির্ভূত। একাধিক বার নিষেধ করলেও মনোজবাবু শোনেননি বলে অভিযোগ। বৃন্দাবনবাবু অভিযোগ, বুধবার দুপুরে মনোজবাবুর তাঁর কাছে পরীক্ষাগারের চাবি চেয়েছিলেন। কিন্তু বৃন্দাবনবাবু তা দিতে চাননি। এর পরেই মনোজবাবু তাঁকে গালিগালাজ করেন ও চেয়ার থেকে ঠেলে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রী ও অন্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের সামনেই আমাকে ওই শিক্ষক অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকেন। আমাকে চেয়ার থেকে ঠেলে ফেলে দেন।” তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মনোজবাবু। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “বুধবার পরীক্ষাগারের চাবি নিতে যাই। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তা দিতে চাননি। কারণ জানতে চাইলে উনি আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন। আমি লোহার গ্রিলের উপর আছাড় খাই। আমার মাথায় চোট লেগেছে।” তাঁর যুক্তি, শিক্ষকদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া ঘরটিতে বসার জায়গার অভাব রয়েছে, তিনি নিজে পদার্থ্যবিদ্যার শিক্ষক। তাই রসায়নগারে বসতে তাঁর কোনও বাধা নেই ভেবেই তিনি সেখানে রোজ বসেন।
এমন ঘটনায় দৃশ্যতই বিব্রত অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন শিক্ষক জানান, অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। তাঁদেরই এক জন বলেন, “পড়ুয়াদের সামনে দুই শিক্ষক এতটাই অসৌজন্য দেখিয়েছেন, মনে হচ্ছিল যেন পাড়ার দুই মস্তানের এলাকা দখল নিয়ে বচসা বেধেছে।” ঘটনার নিন্দা করেছে শিক্ষক সংগঠনও। এবিটিএ-র বর্ধমান জেলা সভাপতি অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “শিক্ষকদের মধ্যে মনান্তর মতান্তর কাম্য নয়। তাও যদি থাকে তা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়া উচিত। এমন কিছু করা উচিত নয়, যা শিক্ষক সমাজকে কলঙ্কিত করতে পারে।” তৃণমূল শিক্ষা সেলের বর্ধমান জেলা সভাপতি নিমাই মহান্তি বলেন, “আমি হতবাক। দু’পক্ষেরই আরও সহনশীল হওয়া উচিত ছিল।” এসটিইএ রাজ্য কমিটির উপদেষ্টা অসিত উপাধ্যায়েরও মত, “এত দূর যাওয়ার আগে ওই দুই শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের কথাটা একটু ভাবতে পারতেন।”
মিঠানি গ্রাম-সহ আশপাশের এলাকা থেকে পড়ুয়ারা আসে এই স্কুলে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরাও। তাঁদের এক জনের মন্তব্য, “স্কুলের মধ্যে শিক্ষকদের এমন আচরণ অভাবনীয়। এতে পড়ুয়াদের মনে শিক্ষকদের জন্য সম্মান তলানিতে ঠেকবে।” জেলার সহকারী স্কুল পরিদর্শক অজিত হাজরা বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের সামনে যা ঘটেছে তা শুধু লজ্জার নয়, অপমানেরও। আমি সোমবার ওই স্কুলে যাব এবং ঘটনার তদন্ত করব।” |