আদালতে তোলার ঠিক আগে কোর্ট লকআপে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন অস্ত্র আইনে ধৃত এক আসামি। বৃহস্পতিবার সকালে আসানসোল আদালতে ঘটনাটি ঘটে। সুশান্ত সরকার ওরফে রাবণ নামে ওই আসামিকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় প্রথমে আসানসোল মহকুমা হাসপাতাল, পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ থাকা সত্ত্বেও কী করে বন্দি গায়ে আগুন দিল, রাত পর্যন্ত অবশ্য তার সদুত্তর মেলেনি।
পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, বার্নপুরের বাসিন্দা রাবণের বিরুদ্ধে একাধিক খুন-সহ বিভিন্ন মামলা চলছে। এ দিন বেআইনি অস্ত্র সরবরাহের মামলায় তাঁকে আদালতে হাজির করার কথা ছিল। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আসানসোল সংশোধনাগার থেকে কোর্ট লকআপে আনা হয়। তাঁকে কোর্ট লকআপে ঢোকানোর কিছুক্ষণ পরেই সেখানকার অন্য আসামিরা ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার শুরু করেন। কোর্ট ইনস্পেক্টর জানান, পুলিশ গিয়ে দেখে, এক অভিযুক্ত দাউ-দাউ করে জ্বলছেন। দরজার তালা খুলে ঢুকে আগুন নিভিয়ে তাঁকে বের করে আনেন পুলিশকর্মীরা। পুলিশের গাড়িতেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানান, শরীরের অনেকটা অংশই পুড়ে গিয়েছে। অবস্থা ভাল না হওয়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, টেরিকটের শার্ট-প্যান্ট পরে ছিলেন রাবণ। জামার নীচে শরীরের সঙ্গে জড়ানো ছিল বিস্কুট ও অন্য নানা খাবারের প্রচুর প্লাস্টিকের প্যাকেট, চা-কফি খাওয়ার প্লাস্টিকের কাপ। সেগুলি সবই অতিদাহ্য। চিকিৎসকেরা তাঁর শরীর থেকে কেরোসিনের গন্ধও পেয়েছেন। কোর্ট লকআপে কর্মরত পুলিশকর্মীদের অনুমান, গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেশলাই জ্বালিয়ে দেন তিনি। পুলিশের দাবি, সংশোধনাগার থেকে অভিযুক্তদের বের করার সময়ে যাতে তাঁদের কাছে আপত্তিকর কিছু না থাকে, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ পরীক্ষা করা হয়। কোর্ট লকআপে আনা হয় কড়া পাহারায়। সেখানেও পুলিশ প্রহরা থাকে। তা হলে এত প্লাস্টিক প্যাকেট, কেরোসিন, দেশলাই রাবণ পেলেন কী করে? এত কাণ্ড ঘটালেনই বা কী করে?
রাবণের আইনজীবী শেখর কুণ্ডুর অভিযোগ, “এক জন অভিযুক্তকে যতটা নজরে রাখা উচিত, পুলিশ তা করেনি।” তাঁর দাবি, “পুলিশ মানসিক নির্যাতন চালানোতেই উনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে এই কাজ করেছেন। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন।” ঘটনার পরেই কোর্ট লকআপে তদন্তে যান আসানসোল-দুর্গাপুরের ডিসিপি শীষরাম ঝাঝরিয়া এবং এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশকুমার চাডিয়া। কোর্ট ইন্সপেক্টর ও কর্মরত পুলিশকর্মীদের দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁরা। আসানসোলের মহকুমাশাসক শিল্পা গৌরীসরাইয়ার দাবি, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি, অভিযুক্তকে সংশোধনাগার থেকে বের করার সময়ে ভাল ভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল। তখন সব ঠিকই ছিল।” পরে এডিসিপি বলেন, “তদন্তে যার গাফিলতি প্রমাণ হবে, তার বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |