|
|
|
|
শিক্ষক নিয়োগ না করেই পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণিতে চালু
অলচিকিতে পঠনপাঠন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সেই জানুয়ারিতে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। তখনই জঙ্গলমহলের পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির আদিবাসী পড়ুয়াদের সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার। অথচ শিক্ষকই নিয়োগ হয়নি! স্কুলের যে কয়েকজন শিক্ষক সাঁওতালি ভাষা জানেন, তাঁদের দিয়েই কোনও মতে পড়ানোর কাজ চলছে। স্বভাবতই ব্যাহত হচ্ছে পঠনপাঠন। আপাতত পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করে সমস্যা সামলানোর চেষ্টা চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড় বলেন, “যে সব স্কুলে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠন শুরু হয়েছে, সেখানে পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হবে। সেই অনুমতিও মিলেছে।”
২০০৮-’০৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে জঙ্গলমহলের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলোয় সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠন শুরুর তোড়জোড় হয়। প্রথম দিকে জঙ্গলমহলের কয়েকটি স্কুলে অলচিকিতে লেখা পাঠ্যবই পৌঁছয়। তবে, সব স্কুলে অলচিকি হরফে পঠনপাঠন শুরু যায়নি। পরিকাঠামোর অভাবেই এই পরিস্থিতি।
এখন জেলায় ৫০টিরও বেশি প্রাথমিক স্কুলে সাঁওতালিতে পড়াশোনা হয়। এক সময় ঠিক হয়েছিল, যে সব স্কুলে কমপক্ষে ৫০ জন ছাত্রছাত্রী সাঁওতালভাষী সেখানেই অলচিকি জানা শিক্ষক নিয়োগ করা হবে সর্বশিক্ষা প্রকল্পে চুক্তির ভিত্তিতে। জঙ্গলমহলের ১১টি ব্লকে এ রকম স্কুলের সংখ্যা ২৯০টি। ছাত্র শিক্ষক অনুপাত যথাযথ রাখতে হলে ৪৪৮ জন অলচিকি জানা শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার ছিল। সেই মতো পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ হয়। ফলে, প্রাথমিকে আর তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে অলচিকিতে পঠনপাঠন শুরু হতেই সমস্যা দেখা দেয়।
গত বছরের আগে পর্যন্ত মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে এই সুযোগ ছিল না। তড়িঘড়ি কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলেই সাঁওতালি ভাষায় পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালুর অনুমতি দেওয়া হয়। আর চলতি শিক্ষাবর্ষে জেলার ১০টি হাইস্কুলে সাঁওতালি ভাষায় পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে একজনও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। অতিথি শিক্ষকও মেলেনি। সমস্যার কথা লিখিত ভাবে শিক্ষা দফতরে জানান জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত।
|
চলতি শিক্ষাবর্ষে অলচিকি শুরু যেখানে |
ব্লক |
বিদ্যালয়ের নাম |
বিনপুর ২ |
বেলপাহাড়ি এসসি হাইস্কুল |
নয়াগ্রাম |
কলমাপুকুরিয়া বিএসসি, ভুরুরবাণী জুনিয়ার |
গোপীবল্লভপুর ১ |
সরিয়া, ধানশোল, গুহালবুড়া জুনিয়ার |
কেশিয়াড়ি |
বারিদা এসএসসি হাইস্কুল |
গড়বেতা ৩ |
দামোদরপুর ধীরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ, নেপুরা বিজলরানি |
শালবনি |
সীতানাথপুর এসএস হাইস্কুল |
পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে মোট ১১৫ জন পড়ুয়া।
শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।
অতিথি শিক্ষকও মেলেনি।
সমস্যার জেরে পরীক্ষাও নেওয়া যায়নি। |
|
জেলা স্কুল পরিদর্শকও (মাধ্যমিক) দফতরে চিঠি পাঠান। শেষমেশ এই সব স্কুলে পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। সোমবারই এই সংক্রান্ত নির্দেশ পৌঁছছে জেলায়। ইতিমধ্যে গত ১৬ এপ্রিল ওই ১০টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে এক বৈঠকও হয়। যে বৈঠকে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারন) রজতকুমার সাইনি। সেখানেও নিজেদের সমস্যার কথা জানান প্রধান শিক্ষকেরা। প্রশাসন তাঁদের আশ্বাস দেয়, সমস্যা সমাধানে সব রকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তবে, ঠিক কবে শিক্ষক নিয়োগ হবে, কবেই বা ওই সব স্কুলে স্বাভাবিক পঠনপাঠন শুরু হবে, সে প্রশ্নের সদুত্তর নেই কারও কাছেই। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছে ছাত্রছাত্রীরা। চলতি মাসে প্রথম পর্বের মূল্যায়ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই ১১৫ জন পড়ুয়ার ক্ষেত্রে মূল্যায়ন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলোকে জানানো হয়েছে, এখনই মূল্যায়ন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনে গরমের ছুটি এবং পুজোর ছুটিতে পঠনপাঠন হতে পারে।
জানা গিয়েছে, ওই ১০টি স্কুলে অন্তত ৩ জন করে মোট ৩০ জন পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হতে পারে। এই শিক্ষক নিয়োগ হবে সর্বশিক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রকল্পের জেলা আধিকারিক শাশ্বতী দাসের বক্তব্য, “রাজ্যের নির্দেশ মতোই পদক্ষেপ করা হবে।” আর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) আশ্বাস, “নতুন পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ হলে আর সমস্যা থাকবে না। সেই প্রক্রিয়াই শুরু হয়েছে।”
|
পুরনো খবর: অলচিকি শিক্ষক নিয়োগে পরিকল্পনা |
|
|
|
|
|