|
|
|
|
অবশেষে উদ্যোগী জেলা প্রশাসন |
লোধাদের দ্রুত শংসাপত্র দিতে শিবিরে জোর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
লোধাদের জাতিগত শংসাপত্র দেওয়ার জন্য এবার শিবির করার উদ্যোগ নিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। লোধা আশ্রম থেকে লোধা গ্রাম-সর্বত্রই এই শিবির করা হবে। সম্প্রতি লোধাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে মেদিনীপুর শহরে লাগাতার অবস্থানে বসেছিল মেদিনীপুর লোধা শবর কল্যাণ সমিতি। অন্য দাবির সঙ্গেই শংসাপত্র পূরণের দাবিও ছিল তাঁদের। তারপরই এই প্রশাসন শিবির করার সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসনের।
২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় লোধাদের জনসংখ্যা ছিল ৬১ হাজার ৩৩৬। পরিবার ছিল ১৫ হাজার ২৬২। বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই। এই জন গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা বাড়লেও জাতিগত শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। জাতিগত শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে যে নথিটি জরুরি তা হল, জমির দলিল। দলিলে জাতির উল্লেখ থাকে। কিন্তু লোধারা জঙ্গলেই বসবাসে অভ্যস্ত ছিলেন। পূর্ব পুরুষের জমি ছিল না বললেই চলে। এখনও বহু লোধা পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। অনেকে বন দফতরের জমিতে থাকেন। ফলে জাতিগত শংসাপত্র চেয়েও মেলে না। আবার অনেক ক্ষেত্রেই সচেতনতার অভাবে লোধারা শংসাপত্র চেয়ে আবেদনই করেন না। লোধা শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাই নায়েকের প্রশ্ন, “জমি নেই বলে কী লোধারা জাতিগত শংসাপত্র পাবেন না, সরকারি সুবিধে থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন?”
প্রশাসনের কাছে লোধা জনসংখ্যার হিসাব থাকলেও কত জন লোধাকে জাতিগত শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে তার নথি নেই। তাই এবার দ্রুত গতিতে শংসাপত্র দেওয়ার জন্য শিবির করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু কী নথি দেখে এই শংসাপত্র দেওয়া হবে? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁদের জমি রয়েছে তাঁদের সমস্যা নেই। কিংবা যাঁরা আগে শংসাপত্র পেয়ে গিয়েছেন তা দেখে তাঁর পরিবারের অন্যদের দিতে অসুবিধে হবে না। যাঁদের এ সব নেই, তাঁদের ক্ষেত্রেও কয়েকটি বিষয় ভাবা হয়েছে। বর্তমানে লোধারা অনেকে স্কুলে পড়াশোনা করছেন বা করেছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁর জাতির কথা উল্লেখ করে বা পঞ্চায়েত প্রধান শংসাপত্র দিলে তা দেখেই দেওয়া যাবে। তাছাড়াও লোধাদের একটা নিজস্ব জাতিগত বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। ফলে নথির অভাবে সমস্যা হবে না।
জেলার খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম মহকুমাতেই বেশি লোধা পরিবারের বসবাস। ঘাটাল ও মেদিনীপুর মহকুমায় খুব কম সংখ্যক লোধা পরিবার রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় লোধা অধ্যুষিত এলাকাতে বেশ কয়েকটি লোধা আশ্রম রয়েছে। সেখানে কেবলমাত্র লোধা পরিবারের ছেলেমেয়েরাই পড়াশোনা করে। ফলে ওই এলাকায় শিবির করলে একদিকে যেমন একাধিক ছাত্র পাওয়া যাবে তেমনই পাশাপাশি গ্রামের মানুষও পাওয়া যাবে। এভাবে কয়েকদিন শিবির করলেই বেশিরভাগ লোধাকেই শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব হবে। এ জন্য মহকুমাশাসকদের তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। মহকুমাশাসকেরা আবার বিডিওদের এই ব্যাপারে যথাযথ পরিকল্পনা করতে বলে দিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একবার জাতিগত শংসাপত্র দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ করা গেলে সহজেই অন্যান্য প্রকল্পেও তাঁদের নিয়ে আসা সম্ভব হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রজতকুমার সাইনি বলেন, “সচেতনতার অভাবে অনেক সময়ই লোধারা শংসাপত্র নিতে আসে না। তাই এ বার আমরাই শিবিরের মাধ্যমে ওই সম্প্রদায়ের লোকের হাতে শংসাপত্র তুলে দিতে চাই।” |
|
|
|
|
|