পঞ্চায়েত মামলায় নোট-তর্ক
কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছেন ডিজি-ই, দাবি কমিশনের
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা-ছত্রচ্ছায়ায় হয়, খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি সেই সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র-সচিবকে নোট পাঠিয়েছিলেন বলে মঙ্গলবার হাইকোর্টে দাবি করলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল।
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কমিশন বনাম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মামলায় গত শুক্রবার ডিজি’র নোটের একটি শব্দকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দেয়। কমিশনকে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র-সচিব যে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন, তার সঙ্গে নোটটিও জোড়া হয়েছিল। সেখানে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কী কী বাহিনী দরকার, তা জানাতে গিয়ে ডিজি ‘সিএপিএফ’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন। রাজ্যের কৌঁসুলির কাছে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার জানতে চেয়েছিলেন, সিএপিএফ বলতে ডিজি ঠিক কী বুঝিয়েছেন?
রাজ্যের তরফে জিপি তখন বলেছিলেন, “সিএপিএফ-এর অর্থ কলকাতা আর্মড পুলিশ ফোর্স (কলকাতা সশস্ত্র পুলিশ)।”
কিন্তু জিপি’র ব্যাখ্যা মানতে নারাজ কমিশনের কৌঁসুলি। এ দিন শুনানির শুরুতেই সমরাদিত্যবাবু বলেন, সিএপিএফ শব্দটির মানে হল, ‘সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স।’ আর এই ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে তাঁর দাবি: ডিজি যে নোট স্বরাষ্ট্র-সচিবকে পাঠিয়েছেন, এবং যার ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র-সচিব কমিশনকে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে আসলে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনেরই কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ স্বয়ং ডিজি-ই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করেছেন বলে সমরাদিত্যবাবুর অভিমত।
তাঁর কথা শুনে বিচারপতি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বিমল চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করেন, “আপনার ডিজি এ বিষয়ে দক্ষ লোক। তিনিও কি সিএপিএফের অর্থ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না?” বিমলবাবু সদুত্তর দিতে পারেননি। বিচারপতি তখন এজি-কে বলেন, “আপনি কি ডিজি-র বক্তব্যের বিরোধিতা করছেন?” বিমলবাবু জানান, সেটা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
পরে সমরাদিত্যবাবু সওয়ালে বলেন, রাজ্য সরকার গোড়া থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করায় আপত্তি তুলছে। অথচ ডিজি’র নোটেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর কথা রয়েছে। “কেন্দ্রীয় বাহিনী আটশো কোম্পানি লাগবে, না সাড়ে সাতশো কোম্পানি সেটা বড় নয়। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমিশন রাজ্যের কাছে কী চাইছে, সেটাই বড় কথা।” মন্তব্য সমরাদিত্যবাবুর। কমিশনের আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি আদালতের বাইরে বলেন, “ডিজি’র মতো অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার সিএপিএফের মানে জানেন না, বিশ্বাস করা কঠিন। নোট পড়ে মনে হয়েছে, ডিজি-ও রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বুঝে রাজ্য বাহিনী ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে ভোট করার পক্ষপাতী।”
বস্তুত পঞ্চায়েত ভোট আয়োজনে কোন বাহিনী কত পরিমাণে লাগবে, সংবিধান মোতাবেক তার সবই নির্ধারণের এক্তিয়ার কমিশনের হাতে বলে দাবি করেছেন সমরাদিত্যবাবু। “এ ক্ষেত্রে রাজ্যের কোনও ভূমিকা নেই।” এ দিন সওয়ালে বলেন তিনি। পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের দু’টি রায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজ্যে পূর্ববর্তী নির্বাচনের সময়কার ও সাম্প্রতিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিরিখে কমিশনই ঠিক করে দেবে, ভোটে কী ধরনের বাহিনী লাগবে। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ-ছ’টি রায় উল্লেখ করে তাঁর বক্তব্য: কমিশন যে পরিমাণ বাহিনী চাইবে, রাজ্য তা দিতে বাধ্য।
পাশাপাশি সমরাদিত্যবাবুর অভিযোগ: পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষ হওয়ার আগেই রাজ্য সরকার একতরফা ভোটের দিন ঘোষণা করে দিয়েছে। সমস্যার উৎস এখানেই।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.