রেলের ১৭টি জোনের মধ্যে অন্তত ন’টিতে জিততে না-পারলে কোনও সংগঠন ফেডারেশনের স্বীকৃতি পায় না। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জোনে এ বার লড়াই করতে নেমেছে তৃণমূল প্রভাবিত ইস্টার্ন রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ওয়ার্কার্স কংগ্রেস (ইআরইডব্লিউসি)।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও চাননি, রেলে তাঁর দল ইউনিয়ন করুক। কয়েক দিন আগে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেত্রী দোলা সেনও দলনেত্রীর সুরেই বলেছেন, রেলে এখনও দলের তেমন কোনও সাংগঠনিক শক্তি তৈরিই হয়নি।
তাই তৃণমূল রেল-ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সামান্য শক্তি নিয়েই ইআরইডব্লিউসি ১৭টি জোনের মধ্যে মাত্র তিনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে পড়েছে। এবং তার নেতৃত্বে রয়েছেন শাসক দলেরই এক নেত্রীর ভাই।
২৫ থেকে ২৭ এপ্রিল রেলের ১৭টি জোনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে কোনও কর্মী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন না। দল করে। যে-দল মোট ভোটের ৩৫% পাবে, তাদের ইউনিয়নই স্বীকৃতি পাবে। এবং আখেরে তারাই রেল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক-স্বার্থে দর কষাকষি করতে পারবে।
এ বার পশ্চিমবঙ্গে রেলের ওই ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে কংগ্রেস প্রভাবিত ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস কংগ্রেস এবং বাম প্রভাবিত ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নও। ওই দু’টি ইউনিয়নের সদর দফতর ফেয়ালি প্লেসের প্রেম অফিসে। তবে ইআরইডব্লিউসি এখনও স্বীকৃত নয় বলেই তাদের কোনও কেন্দ্রীয় অফিস নেই।
এই নির্বাচনে ইআরইডব্লিউসি-র প্রতীক হল গোলাপ। মেনস কংগ্রেসের প্রতীক তেরঙা পতাকা এবং রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের প্রতীক গাঁইতি। নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিয়ন বা তাদের সমর্থকেরা কোনও রকম উত্তেজনা ছড়াতে পারবেন না। জাতপাত-ধর্ম নিয়ে প্রচার চলবে না। অপরীক্ষিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও করা যাবে না।
কিন্তু সম্প্রতি ইআরইডব্লিউসি-র বিরুদ্ধে শিয়ালদেহের ডিআরএম-কে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। হেনস্থা করা হয়েছে এক জন সিনিয়র পার্সোনেল অফিসারকেও। এর জন্য তিন রেলকর্মীকে সাসপেন্ডও করা হয়। তিন জনই ইআরইডব্লিউসি-র সদস্য। ১৫ জনকে ডিভিশনের বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়েছে। রেলকর্মীদের বক্তব্য, এই নির্বাচনে তৃণমূল সমর্থিত রেলের ওই ইউনিয়ন খুব একটা স্বস্তির জায়গায় নেই। এই অবস্থায় রেলের এক শ্রেণির কর্মীর প্রশ্ন, ১৭টির মধ্যে মাত্র তিনটি জোনে লড়াই করে ইআরইডব্লিউসি নিজেদের ছাড়া আর কাদের স্বার্থ রক্ষা করবে?
রেলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সংগঠনের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস প্রভাবিত মেনস কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা শচীন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন, “তিনটি জোনে লড়াই আসলে ফাটকা খেলা। ওরা (ইআরইডব্লিউসি) বাজারটা বাজিয়ে দেখতে চাইছে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তো ওদের অস্তিত্বই নেই। আসলে ওদের লক্ষ্য হল কংগ্রেসকে বেকায়দায় ফেলা।” তাঁর আশঙ্কা, ২৫-২৭ তারিখ কাঁচরাপাড়া এবং শিয়ালদহে অশান্তি হতে পারে।
আর বাম প্রভাবিত মেনস ইউনিয়নের নেতা সন্তোষ ব্রহ্ম বলেন, “আমাদের সংগঠন ১৯২২ সালে গঠিত হয়। তাই দু’দিনের সংগঠন সম্পর্কে কিছু বলব না। তিনটি জোনে লড়ে জিতে স্বীকৃতি পেলেও ফেডারেশনের মান্যতা তো পাবে না! তা হলে? কার স্বার্থ ওরা দেখবে? নিজেদের ছাড়া?”
মতামতের জন্য পরিবহণমন্ত্রী তথা ইউনিয়ন নেতা মদন মিত্রকে বারবার ফোন করেও উত্তর পাওয়া যায়নি। |