পশ্চিমবঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য পৃথক সংস্থা তৈরি হয়েছে ২০০৭ সালে। ২০০৮-এর সেপ্টেম্বরে হয় তার প্রথম বৈঠক। এবং এখনও পর্যন্ত সেটাই শেষ। পরের চার বছরে এক বারও এই সংস্থার বৈঠক হয়নি। দুর্যোগ মোকাবিলার তহবিল পরিচালনাতেও ধরা পড়েছে অনিয়ম।
সারা দেশের দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে এমনটাই রিপোর্ট দিয়েছে সিএজি। আজ সংসদে পেশ হয়েছে রিপোর্টটি। জাতীয় স্তরে যেমন ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি তৈরি হয়েছে, তেমন রাজ্য ও জেলা স্তরেও এই সংস্থা তৈরি হয়েছে। সিএজি-র রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য স্তরে দুর্যোগ মোকাবিলা পরিকল্পনার খসড়া তৈরি হয়েছিল ২০০৮-’০৯ সালে। পরের বছর তা আরও সময়োপযোগী করা হয়। কিন্তু এখনও সেই পরিকল্পনা অনুমোদন পায়নি। ওই পরিকল্পনা তৈরির জন্য কেন্দ্র মঞ্জুর করেছিল ১০.৬৩ লক্ষ টাকা। তা থেকে খরচ হয়েছে মাত্র ৪.৫৫ লক্ষ টাকা। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, রাজ্য স্তরে একটি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা কেন্দ্র থাকবে।
যার সঙ্গে জেলা ও ব্লক স্তরের কেন্দ্রের সরাসরি যোগাযোগ থাকবে স্যাটেলাইট মারফত। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি।
জাতীয় স্তরে দুর্যোগ মোকাবিলায় খামতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সিএজি। সেখানেই পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের তিনটি প্ল্যাটুনকে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
প্ল্যাটুনগুলি আসানসোল, ব্যারাকপুর ও রায়গঞ্জে মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের জন্য আর একটি প্ল্যাটুন তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু ২০১২ সাল পর্যন্ত তার কাজ এগোয়নি এতটুকু। নিয়ম অনুযায়ী তহবিলের খরচ না হওয়া টাকা ব্যাঙ্ক বা কোনও আর্থিক সংস্থায় লগ্নি করার কথা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তা করা হয়নি। সিএজি-র রিপোর্ট বলছে, নিয়ম মানা হলে ২০১১-১২ সালে সুদ বাবদ ১৮৭ কোটি টাকা আয় হতে পারত। তা হয়নি। উপরন্তু ৪৭.৭০ কোটি টাকার এমন খরচ দেখানো হয়েছে, যে খাতে এই তহবিল থেকে টাকা খরচের অনুমতি নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেব অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাই কোনও না কোনও ভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ। তা সে ভূমিকম্পই হোক বা ধস, বন্যা, খরা কিংবা সাইক্লোন। ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাজ্যে ৪৩৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। দেড় কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ সবের মোকাবিলায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখার জন্য দার্জিলিং, বীরভূম ও বর্ধমানকে বেছে নিয়েছিল সিএজি। প্রতিটি জেলাতেই কিছু না কিছু খামতি ধরা পড়েছে।
তবে পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে উপকূল বরাবর সাইক্লোনের সতর্কবার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তার প্রশংসা করেছে সিএজি। দার্জিলিং, বীরভূম ও বর্ধমানে বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মী, শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবককে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেওয়ারও প্রশংসা করা হয়েছে রিপোর্টে। |