পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে শেষ পর্যন্ত রাজ্যপালের দ্বারস্থ হলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার।
ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ও সূচি নির্ধারণ থেকে শুরু করে অবাধ ভোটের স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নে কমিশন ও রাজ্য সরকারের মধ্যে পদে পদে বিরোধ বাধছে। এ হেন পরিস্থিতিতে তাঁর কী করা উচিত, সেই পরামর্শ নিতে শুক্রবার দুপুরে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর: ওই ‘ঘরোয়া’ আলোচনায় কমিশনের যুক্তির সঙ্গে রাজ্যপাল সহমত পোষণ করেছেন। পরে বিকেলে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের প্রধান (ডিজি)-কে ডেকে রাজ্যপাল বলেন, সরকার ও কমিশন দু’পক্ষই শান্তিতে ভোট চায়। তাই অহেতুক জেদাজেদি না-করে সমাধানের পথ খুঁজে বার করা প্রয়োজন।
পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকারের জমানায় প্রথম পঞ্চায়েত ভোট আয়োজন নিয়ে গত ক’মাস ধরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কমিশনের যে মতবিরোধ চলছে, তা অবসানের কোনও লক্ষণ এখনও নেই। প্রথমে রাজ্য চেয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে ভোট করতে। কমিশন আপত্তি জানিয়ে নির্ধারিত সময়েই (এপ্রিল-মে মাসে) ভোট করার কথা বলে। এর পরে রাজ্য দাবি তোলে, পঞ্চায়েতের ভোট নিতে হবে এক দফায়। কমিশন পাল্টা তিন দফায় ভোটগ্রহণের প্রস্তাব দেয়। দ্বন্দ্বের তৃতীয় বিষয় হল, কার নিয়ন্ত্রণে ভোট হবে। কমিশন গোড়া থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভোট চেয়েছে। অন্য দিকে সরকারের বক্তব্য: রাজ্য পুলিশ দিয়েই পঞ্চায়েত নির্বাচন সেরে ফেলা সম্ভব।
|
|
|
এম কে নারায়ণন |
মীরা পাণ্ডে |
|
তবে চলতি সপ্তাহে রাজ্য সরকার কিছুটা নরম হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। একের বদলে দু’দফায় ভোট চেয়ে পঞ্চায়েত দফতর কমিশনকে চিঠি দেয়। দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সংঘাত ছেড়ে সহযোগিতার বার্তাও দেন বৃহস্পতিবার। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। কেন?
কারণ, পঞ্চায়েত দফতরের দু’দফার ভোট-প্রস্তাবে বলা হয়েছে: আগামী ২০ এপ্রিল মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে (তিনটিই কংগ্রেস প্রভাবিত জেলা) ভোট নেওয়া হোক। বাকি জেলায় ভোট হোক ২২ এপ্রিল। কমিশনের এতে তীব্র আপত্তি বলে মহাকরণের খবর। কমিশন কী বলছে?
কমিশনের বক্তব্য: কংগ্রেস প্রভাবিত তিন জেলায় এক দিনে, এবং বাকি অংশে অন্য দিনে রাজনৈতিক প্রভাবের ভিত্তিতে এ ভাবে ভোটের সূচি নির্ধারণ হতে পারে না। তাদের যুক্তি: পশ্চিমবঙ্গে ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ও ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে যে ‘মডেল’-এ ভোট নেওয়া হয়েছিল, ২০১৩-র পঞ্চায়েতে সেই ধাঁচেই ভোটগ্রহণ হোক। রাজ্য নির্বাচন কমিশন-সূত্রের দাবি: অতীতে ভোটের দিনে হিংসার ইতিহাস, ভোটদানের হার, জেলার ভৌগোলিক অবস্থান এবং নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েনের সুবিধা-অসুবিধা বিচার করে তারা নির্বাচনের দিনক্ষণ স্থির করে। “রাজ্যের প্রস্তাব মেনে নেওয়া হলে নির্বাচনের শুরুতেই কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারেও তিন জেলায় এক দিনে, আর বাকি সব জেলায় অন্য দিনে ভোট করার যুক্তি নেই।” মন্তব্য কমিশনের এক মুখপাত্রের। বরং এখনও মাওবাদী-প্রভাবিত জঙ্গলমহলে পৃথক এক দিনে ভোট নেওয়া অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত বলে তাঁর দাবি।
উদ্ভুত এই জটিলতার প্রেক্ষিতে কমিশন কী করবে? এ নিয়ে আলোচনা করতেই নির্বাচন কমিশনার এ দিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। দুপুরে রাজভবনে তাঁদের মধ্যে ঘণ্টাখানেক বৈঠক হয়।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর: মীরাদেবী রাজ্যপালকে বলেন, পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই বলে ডিজি তাঁকে জানিয়েছেন। কিন্তু ত্রিস্তর নির্বাচনের ক্ষেত্রে, বিশেষত রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে শুধু রাজ্য পুলিশ দিয়ে সব কিছু সামলানো যাবে না, সে সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে রাজ্যপাল একমত হয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের ইঙ্গিত। সূত্রের দাবি: কমিশনের তিন দফায় ভোটগ্রহণের প্রস্তাবও যুক্তিসঙ্গত বলে রাজ্যপাল অভিমত প্রকাশ করেছেন।
এ বার কমিশন কী করবে?
প্রশাসনের খবর, রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন এ বার রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখে নিজের মতামত জানিয়ে দেবে। অর্থাৎ জানিয়ে দেওয়া হবে, কমিশন এখনও আগের অবস্থানেই অনড়। |