কোথাও দু’বছর, কোথাও বা চার বছর নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে আছে। সেই প্রক্রিয়া চালু করতে চেয়েও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এবং কলেজে শিক্ষক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় জেরবার রাজ্য সরকার।
প্রাথমিকে সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি, মাধ্যমিকে ৫৫ হাজার এবং কলেজে প্রায় ১৮০০ শিক্ষক-পদ খালি। প্রাথমিকে গত বছর বেশ কিছু পদে নিয়োগ হলেও মাধ্যমিক স্তরে গত দু’বছরে কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। কলেজ স্তরে চার বছর পরে, গত ডিসেম্বরে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কিন্তু ইন্টারভিউয়ের দিন স্থির হয়নি।
কখনও আইনি বাধা, কখনও বা প্রশাসনিক জটিলতায় স্কুল ও কলেজে শিক্ষক নিয়োগ আটকে যাচ্ছে। শিল্পহীন রাজ্যে নিয়োগের সম্ভাবনা এমনিতেই সীমিত। তাই রাজ্যের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের বড় অংশই তাকিয়ে থাকেন স্কুল-কলেজের শিক্ষকের চাকরির দিকে।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ওই সব পদে নিয়োগ না-হওয়ায় তাঁদের উদ্বেগ বাড়ছে। আর সেই সঙ্গে মার খাচ্ছে পঠনপাঠনও।
প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বা পিটিটিআইয়ের জটে ২০০৬ থেকে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ আটকে ছিল। গত বছর প্রাথমিকের বেশ কিছু পদে নিয়োগ হয়েছে। আরও সাড়ে ৩৪ হাজার পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরে। তবে পরীক্ষার দিনক্ষণ সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু সেই সময় কলকাতা হাইকোর্ট একটি রায়ে জানায়, প্রাথমিক শিক্ষকের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। মামলার জেরে তখনকার মতো পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। ওই পদগুলির জন্য পরীক্ষা হবে ৩১ মার্চ।
স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র পরীক্ষায় পিটিটিআইয়ের মতো কোনও সমস্যা ছিল না।
|
|
স্তর |
শূন্য পদ |
প্রাথমিক |
৩৪,৫০০ |
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক |
৫৫,০০০ |
কলেজ |
১,৮০০ |
|
২০১০ সাল পর্যন্ত ফি-বছর শিক্ষক বাছাইয়ের জন্য পরীক্ষা নিয়ে এসেছে কমিশন। কিন্তু ২০১১ সালে কমিশনের কোনও নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি।
৫৫ হাজার পদে শিক্ষক বাছাইয়ের জন্য ওই বছর ডিসেম্বরে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
পরীক্ষা নেওয়া হয় ২০১২ সালের জুলাই মাসে। আর তখন থেকেই বিভ্রাট তাড়া করছে কমিশনের পরীক্ষাকে। প্রশ্ন-বিভ্রাটের জেরে দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা নেওয়া থেকে সেই সমস্যার শুরু। ৩১ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার জন্য গত বুধবার আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশের জেরে টেট-উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এক লক্ষ ৭২ হাজারেরও বেশি প্রার্থী টেট-এ সফল হয়েছেন।
ওই পরীক্ষায় ছিল মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন (এমসিকিউ)। প্রশ্নের সঙ্গে দেওয়া উত্তরগুলির মধ্যে অনেক ভুল ছিল বলে অভিযোগ এনে হাইকোর্টে মামলা করেন কয়েক জন প্রার্থী।
সেই মামলার সূত্র ধরেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরোধিতা করে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ফলে স্কুলে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অজস্র শিক্ষক-পদ খালি পড়ে থাকায় ব্যাহত হচ্ছে পঠনপাঠন।
কেন্দ্রের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী স্কুলগুলিতে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:৪০ হওয়া দরকার।
অর্থাৎ প্রতি ৪০ জন পড়ুয়া-পিছু এক জন শিক্ষক থাকার কথা।
কিন্তু এখন কোথাও কোথাও এক জন শিক্ষককে ১০০ থেকে ১২০ জন পড়ুয়ার ক্লাসও নিতে হচ্ছে। এসএসসি-র প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় আইন মেনে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত বজায় রাখা যাবে কি না, সেই ব্যাপারেও সংশয় তৈরি হয়েছে।
কলেজের নিয়োগ পরিস্থিতি মাধ্যমিক বা প্রাথমিক স্কুলের থেকে কিছুমাত্র ভাল নয়। কলেজ সার্ভিস কমিশন বা সিএসসি বিজ্ঞাপন দিয়েছিল ২০১২-র ডিসেম্বরে। তার আগের বিজ্ঞাপনটি বেরিয়েছিল চার বছর আগে, ২০০৮-এ। আরও অন্তত দু’মাসের আগে ইন্টারভিউ শুরু হবে না বলেই কমিশন সূত্রের খবর।
অথচ সারা রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে শূন্য শিক্ষক-পদের সংখ্যা প্রায় ১৮০০। আবেদনকারী সাড়ে ১৩ হাজার। কলেজগুলিতে এখন প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক কর্মরত। ইন্টারভিউয়ে সফল প্রার্থীদের নিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ বার একটিই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, “এপ্রিলের গোড়ায় ইন্টারভিউ শুরু করা যাবে। যত দ্রুত সম্ভব, তা শেষ করে তৈরি হবে চূড়ান্ত তালিকা।” |