মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৯৯% কাজই হয়ে গিয়েছে। দফতরের কাজকর্মেও তিনি যথেষ্ট খুশি। অথচ তাঁর সরকারের বাইশ মাসের জমানায় সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরে (মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই যার ভার) সচিব বদল হয়েছে পাঁচ বার! এখন রয়েছেন ষষ্ঠ জন।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি মোতাবেক সংখ্যালঘু উন্নয়নের কাজ ভাল ভাবে চললে এত ঘন ঘন দফতরের সচিব পাল্টানোর দরকার কেন পড়ছে, এ বার সেই প্রশ্ন উঠে পড়েছে রাজ্য প্রশাসনের অভ্যন্তরে। বস্তুত দফতরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে এ হেন বদলির হিড়িকে আখেরে কাজেরই ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন মহাকরণের কর্তাদের একাংশ। সরকারের তরফে অবশ্য দাবি: কাউকে সরানো হয়নি, ওঁরা নিজের ইচ্ছেতেই অন্যত্র গিয়েছেন।
সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পরে সংখ্যালঘু উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত পনেরো দফা কর্মসূচি, রাজ্যের নিজস্ব পরিকল্পনা রূপায়ণ, বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ সন্ধানের মতো গুরুদায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে দফতরের সচিবের উপরে। পাশাপাশি বার্ষিক হজ-যাত্রার যাবতীয় বন্দোবস্ত এবং ওয়াকফের মতো স্পর্শকাতর বিষয়টিও তাঁকে দেখতে হয়। প্রসঙ্গত, বাম আমলে রাজ্যে ওয়াকফ কেলেঙ্কারি হয়েছে বলে স্বয়ং মমতার অভিযোগ। এমনকী, এ ব্যাপারে সিবিআই-তদন্তও হচ্ছে।
এমতাবস্থায় ক’মাস অন্তর অন্তর দফতরে সচিব পরিবর্তন নিয়ে প্রশাসনে ক্ষোভ বাড়ছে। সরকারেরই বিভিন্ন মহলের দাবি, এতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কী রকম?
প্রশাসনের একাংশের ব্যাখ্যা: ধরা যাক, সংখ্যালঘু উন্নয়নের কোনও প্রকল্প নিয়ে কোনও সচিব একটি প্রস্তাব তৈরি করলেন। সেটি যখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়, তখন দেখা গেল সচিবকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে!
|
সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর
২২ মাসে ৬ জন |
কে |
মেয়াদ |
বিপি গোপালিকা |
৩ মাস (বাম আমল থেকে ছিলেন) |
নুরুল হক |
৬ মাস |
খলিল আহমেদ |
৩ মাস (দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সচিব) |
বিক্রম সেন |
৬ মাস (সঙ্গে পর্যটন) |
নুরুল হক |
৩ মাস |
সইদুল ইসলাম |
সদ্য দায়িত্বে |
|
নতুন সচিব এসে আবার প্রকল্পের গোড়া থেকে শুরু করছেন। ক’মাস পরে তাঁকেও সরে যেতে হচ্ছে! এতে প্রকল্প রূপায়ণেই দেরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংখ্যালঘু দফতরেরই অনেক অফিসার। এবং বাস্তব পরিস্থিতি যখন ঠিক এই
রকম, তখন দফতরের কাজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘ঢালাও সার্টিফিকেটে’ তাঁরা যারপরনাই বিস্মিতও।
যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মন্তব্য করতে চাননি। তবে তথ্য বলছে, মমতা-জমানায় প্রায় সব দফতরেই ঘন ঘন সচিব বদল করা হচ্ছে। যেমন, শিল্প দফতরে হয়েছে অন্তত চার বার। কিন্তু সংখ্যালঘু উন্নয়ন সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছে। নতুন সরকারের আমলে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর থেকে বদলি হওয়া পাঁচ সচিবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় যে দু’জন টিকেছেন, তাঁদের মেয়াদ ছিল ছ’মাস। উল্লেখ্য, বামফ্রন্ট সরকারের শেষ
পাঁচ বছরে এই দফতরে সচিব বদল হয়েছে সাত বার।
সরকারি সূত্রের খবর: নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম তিন মাস পর্যন্ত সংখ্যালঘু উন্নয়নে সচিবের দায়িত্বে ছিলেন বিপি গোপালিকা। তাঁকে সরিয়ে আনা হয় নুরুল হককে। মাস ছয়েক বাদে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়, নতুন সচিব হয়ে আসেন রাজ্যের বিশেষ সচিব খলিল আহমেদ। তিনিও টিকেছেন মাত্র মাস তিনেক। তার পরে আনা হয় বিক্রম সেনকে, যাঁকে একই সঙ্গে পর্যটনের ভারও দেওয়া হয়। বিক্রমবাবু ছিলেন প্রায় ছ’মাস। তাঁকে সরিয়ে ফের আনা হয় নুরুল হককে, এ বার তিন মাসের জন্য। আপাতত দফতরের সচিব পদে রয়েছেন সইদুল ইসলাম।
সরকারের কী বক্তব্য?
সংখ্যালঘু উন্নয়নের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লার দাবি, “বেশ ক’বার সচিব বদলেছে ঠিকই। তবে আমরা কাউকে সরাইনি। যাঁরা যেতে চেয়েছেন, তাঁদের আটকাইওনি।” উদাহরণও দিচ্ছেন তিনি। “যেমন নুরুল হক দ্বিতীয় বার সচিব হওয়ার পরে পিএসসি’র চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন। সে জন্য তিনি সচিব পদে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। সেই মতো তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।” বলছেন প্রতিমন্ত্রী।
কিন্তু ঘটনা হল, নুরুল হক বর্তমানে প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে সচিব হিসেবে কাজ করছেন। উনি পিএসসি’র দায়িত্ব নেবেন মার্চে। তা হলে এত আগে তিনি সংখ্যালঘু উন্নয়ন ছেড়ে গেলেন কেন? ব্যাখ্যা মেলেনি। প্রথম বার ছ’মাস রাখার পরে তাঁকে বদলি কেন করা হয়েছিল, উত্তর অজানা।
“তুঘলকি কাণ্ড ছাড়া একে আর কী বলব?” মন্তব্য রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার। |