সড়ক থেকে মন্ত্রীর আবাস, সারদা-ক্ষোভ চলছেই
কোথাও কান্না, কোথাও হা-হুতাশ। কোথাও বা রুষ্ট আমানতকারীরা টেবিল-বেঞ্চ পেতে স্তব্ধ করে দিলেন জাতীয় সড়ক। বিক্ষোভেই না থেমে কোথাও বা তাঁরা চড়াও হলেন ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট এমনকী পরিজনদের উপরে।
সারদা কাণ্ডের জেরে বিভিন্ন জেলায় আম-আমানতকারীদের ক্ষোভের এই চেনা-চিত্র মঙ্গলবারও ছিল অব্যাহত। শুধু সারদা নয়, এ দিন অন্যান্য বেশ কয়েকটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থায় লগ্নিকারীরাও পথে নেমেছেন। রাস্তা কিংবা রেল-রোখার পাশাপাশি ওই সব সংস্থার বন্ধ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভেও ফেটে পড়তে দেখা গিয়েছে তাঁদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর এবং ডোমকল থেকে এমনই দুটি লগ্নি সংস্থার চার জন কর্মীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
বুকিং বন্ধ ‘কোপাই টু স্টার ভিলেজ রিসর্ট’-এর। ম্যানেজার-সহ
বহু কর্মী বেপাত্তা। বোলপুর লাগোয়া কেন্দ্রডাঙালে।
উল্টো চিত্রও আছে। আমানতকারীদের পাশাপাশি, সারদার এজেন্টরাও প্রশাসনের উপরে পাল্টা চাপ দিতে এ দিন পৌঁছে গেলেন মন্ত্রীর বাড়ির দোরগোড়ায়। কোথাও বা থানা ঘেরাও করে এজেন্টদের দাবি ছিল নিরাপত্তার। কোথাও বা প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে বসে পড়ে তাঁদের আকুতি ছিল, ‘আমাদের বাঁচান। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন’।
সারদার এজেন্টদের রাস্তাতেই উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার অন্য একটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থায় কর্মীরাও এ দিন সকালে আচমকা যশোহর রোড অবরোধ করেন। পুলিশ সেখান থেকে তাঁদের হটিয়ে দিলে তাঁরা বসে পড়েন রেল লাইনে। দাবি, ওই সংস্থার ‘বড় কর্তাদের’ গ্রেফতার করতে হবে। হাবড়ার ওই অর্থলগ্নি সংস্থার দফতরে অবশ্য গত জানুয়ারি মাস থেকেই তালা ঝুলছে। পুলিশ জানায়, প্রায় ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় তাঁদের রেল লাইন থেকে তোলা গেলেও ততক্ষণে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় রেল চলাচল সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সারদা-বিক্ষোভের ঢেউ এ দিন পৌঁছয় মন্ত্রীর বাড়িতেও। মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার বাড়ির সামনে সারদা-র প্রায় পঞ্চাশ জন এজেন্ট বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সুকুমারবাবু বাড়ি ছিলেন না। ফলে প্রহরা ছিল কিঞ্চিৎ ঢিলেঢালা। মন্ত্রীকে না-পেয়ে তাঁর বাড়ির এক নিরাপত্তারক্ষীর হাতে শেষ পর্যন্ত স্মারকলিপি দিয়ে ফিরে যান তাঁরা।

সীমানা পাঁচিল ও গেট তৈরি ছাড়া
আর কোনও কাজ হয়নি আম্রপালি
হাউসিং কমপ্লেক্সের। মালদহে।

গ্লোবাল অটোমোবাইল কারখানায় সাজানো
মোটরবাইক। সারদা গোষ্ঠী কেনার আগেই অবশ্য
তৈরি হয়েছিল এগুলো। —নিজস্ব চিত্র
শাসকদলের কোনও নেতা-মন্ত্রীকে না পেলেও পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, চণ্ডীপুর ব্লকের সারদা গোষ্ঠীর এক দল এজেন্ট এ দিন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়াকে সামনে পেয়ে ঘিরে ধরে রীতিমতো কান্নাকাটি শুরু করেন। তমলুকে আইন অমান্য কর্মসূচিতে অংশ নিতে এসে ওই এজেন্টদের সামনে পড়ে বিড়ম্বিত মানুসবাবুকে বলতে শোনা যায়, “ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিধানসভার অধিবেশন ডাকার দাবি জানাচ্ছি।” সারদা-কাণ্ডের জেরে কংগ্রেসের আইন অমান্য কর্মসূচিতে এ দিন অংশ নেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টচার্যও। আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দফতরের সামনে আইন অমান্য কর্মসূচির পরে গ্রেফতারও করা হয় প্রদীপবাবুকে।
সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট এবং আমানতকারীদের মিছিল ও পাল্টা মিছিল দিনভর চলেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও। শিলিগুড়িতে আমানতকারীদের একটি প্রতিনিধি দল সারদা-কাণ্ডে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন। গৌতমবাবুও ক্ষুব্ধ আমানতকারীদের বিক্ষোভের আঁচ পেয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মানুষ বিপদে পড়লে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই হবে।”
মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে সন্মার্গ সংস্থার এজেন্টদের রেল ও সড়ক
অবরোধ (বাঁদিকে)। ডানদিকে, বনগাঁ থানায় বিক্ষোভ সারদার এজেন্টদের। —নিজস্ব চিত্র।
বালুরঘাটে হিলি এলাকার ত্রিমোহিনীতে সারদা গোষ্ঠীর প্রায় ২৫ বিঘা জমি রয়েছে। স্থানীয় আমানতকারীদের দাবি, ওই জমি অধিগ্রহণ করে বিক্রির দাবি তোলেন তাঁরা। প্রায় শ-খানেক আমানতকারীর দাবি, ওই জমি বেচেই সরকার তাঁদের লগ্নি করা টাকা ফিরিয়ে দিক।
সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা এমনই অজস্র দাবি-দাওয়ার মধ্যেই এ দিন নদিয়ার শিকারপুরের বাসিন্দা সুমন পাল অন্য একটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পেশায় ব্যবসায়ী সুমনবাবু বলেন, “আমি প্রায় দেড় লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিলাম ওই সংস্থায়। কিন্তু জানুয়ারি মাস থেকে টাকা আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই সংস্থার দফতরে গিয়ে দেখি তালা ঝুলছে।” তাঁর অভিযোগ পেয়ে ওই সংস্থার এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.