সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের গ্রেফতারকে স্বাগত জানিয়েই কেলেঙ্কারির
তদন্তে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাগুলিকে যুক্ত করার দাবি তুলল বিরোধী বামেরা। ধৃতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকেও নজর দিতে বলছে তারা। একই সঙ্গে বিরোধীদের অভিযোগ, আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের বিষয়ে সরকারি তরফে এখনও আশ্বাস মিলছে না। হচ্ছে না কোনও পদক্ষেপও।
সারদা-কাণ্ডের পাণ্ডা খোদ সুদীপ্তবাবু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা কাশ্মীর পুলিশের হাতে ধরা পড়ার খবর ঘোষণার পরে মঙ্গলবার আলিমুদ্দিনে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “ভাল খবর যে, তিন জন গ্রেফতার হয়েছে। এর পরে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের পরবর্তী পর্যায়ে একটা ব্যাপার দেখা দরকার। তখন তদন্ত হওয়া উচিত কেন্দ্রীয় সরকার ও অন্য রাজ্যের সঙ্গে যৌথ ভাবে। ধৃতের বিরুদ্ধে অসম পুলিশের কাছেও অভিযোগ ছিল।” বিরোধী দলনেতার দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি এবং কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক দফতরের অধীন এসএফআইও (সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেটিং অফিস)-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে তদন্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা দরকার। সূর্যবাবুর কথায়, “ধৃতদের নিরাপত্তার প্রশ্নটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বস্তুত, বামেদের অভিযোগ, সারদা-কাণ্ডের সঙ্গে এ রাজ্যের শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা জড়িত। তাই তাদের আশঙ্কা, শুধু রাজ্য সরকারের হাতে তদন্তের ভার থাকলে অনেক তথ্যই চেপে দেওয়া হতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা সেবি-র সাহায্য নেওয়ার কথা বলেছেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়াও। আবার রাজ্যের শাসক দলের নাম এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বলে ধৃতদের নিরাপত্তার কথাও বলছে বামেরা। এক কংগ্রেস বিধায়ক স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ১৯৮০-৮১ সালে সঞ্চয়িতা-কাণ্ডে ধরা পড়ার পরে সেই সংস্থার মালিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা। যদিও সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছিলেন।
সূর্যবাবুর সুরেই এ দিন সিঙ্গুরে বামফ্রন্টের কর্মিসভার শেষে প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু বলেছেন, “আমরা তো অনেক আগেই অপরাধীকে গ্রেফতার করতে বলেছিলাম।” আলিমুদ্দিনে ঘরোয়া আলোচনায় রবিবারই বিমানবাবু বলেছিলেন, সুদীপ্ত সেন হরিদ্বারের কাছাকাছি রয়েছেন বলে খবর। এখন পুলিশি তদন্তও বলছে, সুদীপ্তবাবুরা হরিদ্বার হয়েই কাশ্মীরে ঢুকেছিলেন।
এ দিন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেন, “সারদার সব কর্তাকেই গ্রেফতার করতে হবে। যা গেছে তা গেছে, এটা মুখ্যমন্ত্রীসুলভ কথা নয়! এখন তো মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে! যেখানে যাবেন, সেখানে উত্তর দিতে হবে!”
পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পূততুণ্ডের দাবি, “ধনীদের জন্য আর্থিক বেল-আউট প্যাকেজের ব্যবস্থা হতে পারলে, চিট ফান্ডে যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন, সেই গরিব মানুষের পাশেও সরকারকে দাঁড়াতে হবে।” পিডিএসের রাজ্য সভাপতি সৈফুদ্দিন চৌধুরীর মতে, “কোনও চিট ফান্ডের সঙ্গে সরকার তথা শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের এ ভাবে প্রকাশ্যে ওঠা-বসা আগে কোনও রাজ্যে দেখা যায়নি!” সারদা-কাণ্ডে যুক্ত সব নেতাকে পদ থেকে সরানোর দাবি তুলে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন নেতা কার্তিক পাল বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কালো টাকার বিরুদ্ধে বলেন, তখন তৃণমূল কেন এর সঙ্গে যুক্ত, বাংলার মানুষ জানতে চান!” |